পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চ, সারা ভারত ক্ষেত মজুর ইউনিয়ন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির আহ্বানে সামাজিক ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠার দাবিতে কলকাতার শ্রমিক ভবনে অনুষ্ঠিত হল এক রাজ্য কনভেনশন। দলিত শোষণ মুক্তি মঞ্চের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ডাঃ রামচন্দ্র ডোমের এদিনের কনভেনশন উদ্বোধন করার কথা থাকলেও তিনি শারীরিক কারণে উপস্থিত হতে পারেননি।
এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৭৬ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশে পিছিয়ে পড়া মানুষদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, জেলায় এই অংশের মানুষ শিক্ষা থেকে, স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত। সবকিছু সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকলেও তাতে কোনও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। দেশে ১৫টা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা চলে গেছে। কিন্তু পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু ভাবা হয়নি। সাধারণ গরিব খেটে খাওয়া মানুষ যে যে সরকারি প্রকল্প থেকে উপকৃত হতে পারে সেই সব প্রকল্প থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে, বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। শোষণের পথকে আরও প্রশস্ত করা হচ্ছে।
সংগঠনের নেতা অলকেশ দাস নিজের বক্তব্যে বলেন, খুব স্পষ্ট করে মনে রাখতে হবে সামাজিক অধিকার আর অর্থনৈতিক অধিকার বিষয়টা এক নয়। যদিও সংবিধানে আছে সমতার কথা। স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই ভারতে এক দলিত ছাত্র মাস্টারমশাইয়ের কুঁজো থেকে জল খেয়ে নেওয়ায় তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়।
দেবেশ দাস পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে বলেন, দলিত এবং আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন দলিত, আদিবাসীরা। বিজেপি দেশের শাসন ক্ষমতায় আসার পর এই অত্যাচার আরও বেড়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পশ্চিমবঙ্গেও বর্তমান সরকারের আমলে এই ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। এনসিআরবি-র তথ্য অনুসারে শেষ দু’বছরে দলিতদের ওপর আক্রমণের হার বেড়েছে ২০ শতাংশ, খুন বেড়েছে ১৩ শতাংশ, ধর্ষণ বেড়েছে ১৪ শতাংশ। এই অত্যাচার ক্রমশ বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করতেই আজকের এই কনভেনশন।
কনভেনশনে পুরুলিয়া থেকে আসা সুকুমার বাউরি পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে জানান, “বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে দলিতদের ওপর বিভিন্ন রকম অত্যাচার নেমে আসছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেই এই সমস্ত ঘটনা বাড়ছে। জমি সংক্রান্ত সমস্যা খুবই বেড়েছে। করোনার পর তফশিলি জাতি, উপজাতি গোষ্ঠীভুক্ত শিশুদের একটা বড়ো অংশ ইস্কুলে যাবার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। তাঁরা আর ইস্কুলমুখী হচ্ছে না। যাদের পড়াশুনা করার দরকার তাঁরা এখন মজুরির কাজ ধরে নিয়েছে। পরিস্থিতি এমন দিকে চলে যাচ্ছে যা আগামী দিনে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।”
নদীয়ার হাফিজ শেখ জানান, পিছিয়ে পড়া আদিবাসী, দলিত জনগোষ্ঠীর মানুষের শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার, জল জমি জঙ্গলের অধিকার, বাসস্থানের অধিকারের দাবিতে আমাদের এই কনভেনশন। সাম্প্রতিক সময়ের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষের মনোনয়নের অধিকার, ভোটদানের অধিকার কেড়ে নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে লাগাতার চক্রান্ত চলছে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করার। এর বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের এই কনভেনশন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষ মিস্ত্রি পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে বলেন, “যে দুটি সরকার এখন আছে এই দুই সরকারই এসসি, এসটিদের ওপর চরম অত্যাচার নামিয়ে এনেছে। শূন্যপদে নিয়োগ করা হচ্ছে না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে আমরা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছি। কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না। আত্মঘাতী হতে বাধ্য হচ্ছে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন