ঐতিহাসিক রায় কলকাতা হাইকোর্টের। বাতিল করে দেওয়া হল ২০১৬-র পুরো নিয়োগ প্যানেল। চাকরি হারালেন প্রায় ২৫,৭৫৩ জন। সোমবার এই রায় ঘোষণা করে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। ভোটের মধ্যেই আদালতের এই নির্দেশ রাজ্য সরকারের কাছে বড়ো ধাক্কা।
এই প্যানেল বাতিল নিয়ে সরাসরি রাজ্যের শাসক দলকে তোপ দাগছে সিপিআইএম। যাদবপুরে বাম প্রার্থী সৃজনের ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “ভোটের মুখে এসএসসি পরীক্ষার রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাল আর কাঁকড় আলাদা করতে পারেনি কলকাতা হাইকোর্ট। তৃণমূলের দুর্নীতির সৌজন্যে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা আজ মার খেয়ে গেলেন। আমরা যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের পাশে আছি, প্রথম থেকেই।“
সৃজন আরও বলেন, “যাদের চাকরী পাওয়ার কথা ছিল না, তৃণমূলকে টাকা দিয়ে সাময়িক ভাবে চাকরী জুটিয়েছিলেন, তাদেরকে বলছি, তৃণমূলের পার্টি অফিস, তৃণমূল নেতার কাছে গিয়ে টাকা চান। প্রয়োজনে আমরা থাকব। মানুষকে লুঠ করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে তৃণমূল, তাদের শাস্তির প্রয়োজন। শুধু এসএসসি বলে নয়, টেট, পিএসসি সবক্ষেত্রে।“
এরপরেই নাম না করে সায়নী ঘোষকে নিয়ে সৃজন বলেন, “যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থীর নাম টেট দুর্নীতিতে জড়িয়েছিল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা একবার ডাকল, গেলেন, পরেরবার ডাকল, গেলেন না। কেউ কিছু বলল না। তার মানে কি সেটিং হল? কোন সেটিংয়ের ভরসায় তৃণমূল এই দুর্নীতি করে গেছে এতদিন? আমরা এগুলোর জবাব চাই। যাদের চাকরী চুরিতে নাম জড়িয়েছে, হয় জেলে যাবে, নয় বিজেপিতে যাবে। বিজেপিতে গিয়ে পার পাবে না, জেলে পাঠানোর জন্য লাল ঝান্ডা আছে।“
হাওড়ার সিপিআইএম প্রার্থী সব্যসাচী চক্রবর্তীর জানান, “কলকাতা হাইকোর্টের রায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, রাজ্যের সরকার শুধু সরকারি উদ্যোগে দুর্নীতিকে প্রশয় দেয়নি, সরকারি উদ্যোগে দুর্নীতি করিয়েওছে। কোরাপ্ট গর্ভমেন্ট এবং কোরাপ্ট ক্যাবিনেট।“
এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলে বাম প্রার্থী বলেন, “এই মুহুর্তে আর এক মিনিটও নৈতিক অধিকার নেই সরকার চালানোর, অবিলম্বে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে পদত্যাগ করতে হবে। এই অপদার্থ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। বাংলার বুকে আইনের শাসন ফেরাতে গেলে, হাইকোর্টের রায়কে কার্যকরী করতে হবে।“
অবিলম্বে আদালতের এই রায়কে কার্যকর করতে হবে বলে দাবি জানান সব্যসাচী। তিনি বলেন, “যেসমস্ত ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করে দিয়েছে এই সরকার, সেই সমস্ত ছেলেমেয়েদের কাছে আমাদের আবেদন, যারা প্রকৃত অর্থে যোগ্যতাসম্পন্ন, তাঁদেরকে চাকরী দেওয়ার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করা হোক। দীর্ঘদিন ধরে যে ছেলেমেয়েরা রাস্তায় বসে আছেন, তাঁদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হয়েছে। তাঁদের এই আন্দোলন আজ সফল হয়েছে।“
মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দেগে সব্যসাচী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়িয়ে প্যারেট করেছেন, মজা মশকরা করেছেন। সেই সমস্ত ছেলেমেয়েরা ঝড়-বৃষ্টি-রোদে বসেছিলেন। আজকে গোটা পরিস্থিতিটাই আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে, কতটা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হলে, এই রকম একটা সরকার চলতে পারে। যে সরকার বেআইনি কাজ করে, তাঁদের অমান্য করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।“
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন