ইতিমধ্যেই দেশের বেশকিছু রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা বিক্রির পথে এগিয়ে গেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যে তালিকায় রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে বীমা, স্টীল প্ল্যান্টের মত বড়বড় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা। এর পাশাপাশি নতুন সংযোজন হিসেবে বেসরকারিকরণের তালিকায় উঠে এসেছে ভারতীয় রেলও।
এই প্রসঙ্গে CPI(M) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "মূলত কোভিডের সময় থেকে রেল কার্যত মানুষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করছে। প্রবীণ মানুষদের জন্য যে ছাড় ছিল ভাড়ায়, সেই ছাড় এখন আর দিচ্ছে না। তাঁদের জন্য যে সুযোগ সুবিধা ছিল সেগুলো কেন্দ্রীয় সরকার আর মান্য করছে না। কোভিড পিরিয়ডে রেলের খরচ কমেছে, সার্ভিস কম থেকেছে। ব্ল্যাঙ্কেট ইত্যাদি দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাড়া রোজ বাড়ছে।"
তিনি আরও বলেন, "সরকারের নেতা-মন্ত্রী-মাতব্বরেরা লুঠ করে বেড়াবে আর গরীব মানুষ, সাধারণ মানুষ, নিত্যযাত্রী তাদের উপর বোঝা চাপবে। এ কখনও হয়? ৫ টাকা প্ল্যাটফর্ম টিকিট এখন ৫০ টাকা। কত গুণ বেড়ে যাচ্ছে! মানুষের উপর বোঝা বাড়াবার মনোভাব থেকে দিল্লী এবং রেল চলছে। এটা বেঠিক, এটা অন্যায় কাজ হচ্ছে। এটাই রেল, এটাই কেন্দ্রীয় সরকার।"
সুজন বাবুর বক্তব্য অনুযায়ী, রেলের ৫৬ হাজার পদ ইতিমধ্যেই বিলোপ করা হয়েছে। এর আগেও অনেক পদ বিলুপ্ত হয়েছে। পূর্বে রেলকর্মীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯ লক্ষ। রেলের পরিষেবা বাড়লেও লোক কমতে কমতে এখন তা প্রায় ৮-৯ লক্ষে এসে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, আরও ১৫ হাজার পদ ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। দুবছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার রেলে নিয়োগ হবে বলে দরখাস্ত চেয়েছিল। প্রায় সোয়া দু কোটি দরখাস্ত জমা পড়েছিল। কিন্তু এখনও সেই নিয়োগ হয়নি।
বেসরকারীকরণ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে সিপিআইএম নেতা বলেন, "মানুষের কর্মসংস্থান প্রয়োজন। সবচাইতে বড় অর্গানাইজেশন রেল। সবই কি বিক্রি করে দেবে? সরকার কী দায়িত্ব অস্বীকার করবে? রেল মানে তো শুধু লাভের জন্য নয়। ইট ইজ আ সার্ভিস টু দ্য পিপল। রেল মানে গণপরিবহন। গণপরিবহন জরুরি পরিবেশ রক্ষার জন্য। ফলে দেশকে রক্ষা করার জন্যও বটে। সেখানে কার্যত রেলকে বেচে দেওয়ার মনোভাব, বেসরকারীকরণের মনোভাব, তার মধ্যে দিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলার মনোভাব এবং তারই অংশ হিসেবে একের পর এক কর্মসংস্থানের পদ বিলোপ। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবকেই স্পষ্ট করছে।"
সূত্রের খবর অনুযায়ী, আগামী ৩১ মে সারা দেশব্যাপী ১ দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে অল ইন্ডিয়া স্টেশন মাস্টারর্স অ্যাসোসিয়েশন (AISMA)। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তাঁরা অভিযোগ জানিয়েছেন, ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে রাতের ডিউটি ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও বেসরকারীকরণ বন্ধ করা, অবিলম্বে স্টেশন মাস্টারদের শূন্যপদ পূরণ করা, নিরাপত্তা প্রদান এবং স্টেশন মাস্টারদের স্ট্রেস ভাতা সহ একাধিক দাবিতে তাঁরা ধর্মঘটে সামিল হতে চলেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন