স্কুলের পর এবার কলেজ শিক্ষক নিয়োগেও দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠলো রাজপথ। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ভুক্তভোগী চাকরী প্রার্থীরা। বুধবার, কলেজ স্ট্রীটের রাস্তায় নেমে কলেজ সার্ভিস কমিশনে (CSC) দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এই দুর্নীতির জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক করকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ২০১৮ সালে সি এস সি’র মেধাতালিকাভুক্ত নিয়োগ না পাওয়া প্রার্থীরা।
এদিন কলেজ স্ট্রীটের বিক্ষোভস্থল থেকে আন্দোলনকারী প্রিয়াঙ্কা কন্ডু জানান তিনি ২০১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোলে স্নাতকোত্তর (MA) এবং গোল্ড মেডেলিস্ট। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় ফেরার পর এই প্রিয়াঙ্কাকে তাঁর প্রাপ্য সোনার মেডেল তুলে দেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রিয়াঙ্কার বয়ানেই এদিন উঠে আসে কলেজে শিক্ষক নিয়েগে দুর্নীতির অভিযোগ।
প্রিয়াঙ্কা কন্ডু দাবি করেন, ‘সিএসসি’র চেয়ারম্যান দীপক করের তত্বাবধানেই অধ্যাপক নিয়োগে দুর্নীতি শুরু হয়েছে। দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে সিএসসি। প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করে চাকরী দেওয়া হয়েছে মেধা তালিকায় নাম না থাকা ব্যক্তিদেরও। কী জন্য, কার নির্দেশে এসব হয়েছে, তা জানতে আমরা তদন্ত দাবি করছি। আর বাংলার ছাত্র যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দায়ে দীপক করকে পদত্যাগ করতে হবে।’
একই দাবি করেছেন ভুক্তভোগী চাকরী প্রার্থী হিমাদ্রি মন্ডল। তিনি কমিশনের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন ‘শুধু টাকার বিনিময়ে চাকরী দেওয়া হয়নি, স্বজন পোষণও করা হয়েছে সিএসসি’তে। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারিতা করে নিয়েগে অস্বচ্ছতা বজায় রেখেছে কমিশন। এখনো পর্যন্ত যারা চাকরি পেয়েছে, কোন কলেজে চাকরি পেয়েছে, তাদের কলেজে পড়ানোর আদৌ যোগ্যতা আছে কিনা সেটুকুও প্রকাশ করেনি কমিশন। এজন্যই আমরা সিএসসি দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
ভুক্তভোগী চাকরী প্রার্থী প্রসেনজিৎ মাইতি এদিন পিপলস রিপোর্টার প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, ‘কমিশন যদি দুর্নীতি না করে থাকে, তাহলে কেন তারা কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মেধা তালিকায় থাকা প্রার্থীদের স্কোর শীট প্রকাশ করছে না? কেন তাঁরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে? গত ১৫ নভেম্বর ২০২১-এ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়া’র ডিভিশন বেঞ্চ স্বচ্ছতার জন্য নিয়োগের ‘স্কোর শিট’ প্রকাশের জন্য সিএসসি-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, তা তারা মানে নি।’
২০১৮ সালের পর ২০২০ সালের শেষে নতুন করে কলেজে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সিএসসি। বর্তমানে সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ইন্টারভিউ পক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর তা নিয়েও এদিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন চাকরীপ্রার্থী বিনয় কৃষ্ণ পাল।
এদিন তিনি জানান, ‘২০১৫ সালে সিএসসি’তে অধ্যাপক নিয়োগের ইন্টারভিউতে নম্বর ছিল ২৫, যা ২০১৮ সালে বাড়িয়ে ৪০-এর অধিক করা হয়েছে। যা আসলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে এবং ইউজিসি’র গাউড লাইনের পরিপন্থী। দুর্নীতি, স্বজন পোষণ করতে সেই নাম্বার প্যাটার্ন ২০২০ সালেও রাখা হয়েছে। ফলে ২০১৮ সালের মতো চলতি ইন্টারভিউতে প্রকৃত মেধাবীরা আবার বঞ্চিত হবেন।’
তবে, এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক করকে ফোন করা হলে, তিনি কোনও উত্তর দেননি।
প্রসঙ্গত, মহামারী করোনার কারণে মেধা তালিকার মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশিকা জারি করে কমিশন। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর, মেধাতালিকার শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু, এই সময়কালের আগেই নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে কলেজ সার্ভিস কমিশন। যা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। জানা যায়, ২০১৮ সালে কমিশন যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়েছে, তাতে ডাক পায়নি একাধিক বিষয়ের প্রার্থীরা। এমনকি, মেধা তালিকায় মেয়াদ বৃদ্ধি ক্ষেত্রে সমবন্টন নীতি মানা হয়নি। তারপর নিয়োগের দাবিতে কলেজ স্ট্রিট, গান্ধী মূর্তির পাদদেশ, ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে একাধিকবার পথে নেমেছেন বঞ্চিত প্রার্থীরা।
শুধু তাই নয়, নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবিতে আন্দোলনকারীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ইমেল মারফত আবেদনও জানিয়েছে। বাদ যাননি রাজ্যের বিধায়ক, সাংসদরাও। এমনকি, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, এই নিয়ে ৬ বার রাজ্য শিক্ষা দফতরে ‘ডেপুটেশন’ও জমা দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ, সকলেই কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ‘দুর্নীতি’র বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। কেউই ভাবেনি- স্কুল হোক বা কলেজ, সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছভাবে শিক্ষক নিয়োগ জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত এবং জন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন