১৮টি বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহার নাম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছে সিপিআই(এম)-এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে, যশবন্ত সিনহাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করা নিয়ে CPI(M) কর্মীদের অন্দরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তাঁরা। কারণ, যশবন্ত সিনহা আগে বিজেপিতে ছিলেন এবং সম্প্রতি তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
এ নিয়ে মুখ খুলেছেন সিপিআই(এম)-এর রাজ্যসভার সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গে দলের একমাত্র সংসদীয় প্রতিনিধি বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। সর্বসম্মতিক্রমে বিরোধী প্রার্থী নির্বাচন করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে ভুল প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিকাশ রঞ্জন। তাঁর কথায়, ‘এটা সত্য যে, আমাদের দল সব বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য চেয়েছিল। তবে আমি এখনই বলতে পারি, প্রার্থী বাছাই ঠিক হয়নি।’
একই সুর শোনা গেছে দলের এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্যদের গলাতেও। নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংবাদসংস্থা আইএএনএস কে তিনি জানিয়েছেন, "সিনহা অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তিনি সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সহ-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। রাজনৈতিক সংখ্যার বিচারে , সিনহার পরাজয় আগে থেকেই নির্ধারিত। আমি নিশ্চিত যে পরাজয়ের পরে তিনি আবার তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সহ-সভাপতির পদে বহাল হবেন। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দল (CPIM) রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে পারত। ইতিমধ্যেই আমরা এই বিষয়টি নিয়ে দলীয় কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে শুরু করেছি। তাঁরা আমাদের প্রশ্ন করছে যে আমরা কেন তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশলের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম?"
২০২১ সালে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন যশবন্ত সিনহা। এর আগে হাজারিবাগ আসন থেকে বিজেপির টিকিটে বহুবার সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। পরে তৃণমূলে যোগদান করে দলে সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদ পান যশবন্ত। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হন তিনি। কিন্তু, তিনি বিজেপি ছাড়লেও পুত্র জয়ন্ত এখনও বিজেপিতে রয়েছেন। তাঁরই ছেড়ে যাওয়া হাজারিবাগ আসন থেকেই সাংসদ হন পুত্র জয়ন্ত। এবার, সেই বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত সিনহার বাবা যশবন্তকে বিরোধীরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করায় নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
গত ১৫ মে, বুধবার দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বৈঠকে বসেছিলেন কংগ্রেস-সহ ১৮ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। এই বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে শরদ পওয়ারের নাম প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত প্রার্থী হতে রাজি হননি তিনি। এমনকী, বিরোধী প্রার্থী হিসেবে ফারুখ আবদুল্লা ও গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়াতে অস্বীকার করেন। এরপরেই গত মঙ্গলবার, যশবন্ত সিনহাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিরোধীরা।
আগামী ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ভোট গণনা ২১ জুলাই। তার আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৯ জুন। মনোনয়নপত্র যাচাইয়ের হবে ৩০ জুন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২ জুলাই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন