দশ দফা দাবি নিয়ে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তারপরেই বাকি সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানালেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী ফোনে যেভাবে কথা বলেছেন হল তা ‘অসংবেদনশীল’ বলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
এদিন বিকেলে ধর্মতলায় জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চে যান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথাও বলান আন্দোলনকারীদের। এরপর জুনিয়র চিকিৎসকরা বৈঠকের কথা বললে সোমবার বৈঠকের আহ্বান দেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বিকেল ৫টায় বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ফোনে কথোপকথনের পর সাংবাদিক বৈঠক করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ‘‘আমরা সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে যাব। উনি আমাদের দাবি মেনে নিন, আমরাও কাজে ফিরতে চাই। নির্দেশিকা বের করার জন্য গত ১৪ দিন ধরে বসে আছি।’’
অন্যদিকে, এতদিন পরেও নাকি মুখ্যমন্ত্রী জানেনই না জুনিয়র চিকিৎসকদের দশ দফা দাবি কী কী। এনিয়ে ক্ষুব্ধ জুনিয়র চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘৭১ দিন পরেও শুনতে হচ্ছে উনি দাবিগুলিই জানেন না! সোমবার আমরা ওঁর দেওয়া সময়েই বৈঠকে যাব। সরাসরি আমাদের মুখ থেকে শুনলে হয়ত ওঁর বুঝতে সুবিধা হবে।“ শনিবার অনশনকারীরা স্পষ্ট করেছেন, সোমবার তাঁদের দাবি পূরণ না হলে, আন্দোলন একই তীব্রতায় জারি থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ঘিরে ক্ষুব্ধ সকলেই। জুনিয়র ডাক্তারেরা বলছেন, ‘‘ওঁর কি মনে হচ্ছে এই অনশনের কোনও গুরুত্ব নেই? যাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, তাঁদের প্রচেষ্টাকে এত লঘু করে দেখা হচ্ছে কেন? যে ভাবে কাজে ফেরার অনুরোধ করছেন, তা বেদনাদায়ক।“
ফোনে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা অসংবেদনশীল বলে মনে করছেন আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে ফোনে কথা হল, তা খুবই অসংবেদনশীল। ওঁরা অনশন তোলানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা অনশনে বসেছেন, এটা তাঁদের সকলের সিদ্ধান্ত। ফলে আলোচনা করেই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’’ দেবাশিস আরও বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম আজ সব মিটতে চলেছে। কিন্তু উনি বললেন, আজ ব্যস্ত। সোমবার বসবেন। আমরা সোমবারের অপেক্ষায় থাকব।’’
এই নিয়ে আরও এক আন্দোলনকারী আশফাকুল্লা নাইয়া বলেন, ‘‘উনি সোমবার সময় দিয়েছেন মানে আরও দু’দিন অনশন চলবে। মনে রাখবেন, অনশনকারীরা শুধু একটা ‘ফোন কল’-এর জন্য জীবন বাজি রাখেনি। তারা শুধু একটা প্রতিশ্রুতির জন্য জীবন বাজি রাখেনি। আমাদের চোখ থাকবে সোমবারের বৈঠকের দিকে।’’
অনশনকারী চিকিৎসক রুমেলিকা কুমার জানিয়েছেন, ‘‘আজ শনিবার। আর উনি সোমবার বৈঠক ডেকেছেন। ৭১ দিন পরেও শুনতে হচ্ছে উনি নাকি দাবিগুলি জানেনই না। তা হলে কি ওঁকে জানানো হচ্ছে না? এত কষ্ট কি তাঁর কানে পৌঁছচ্ছে না? আরও দু’দিন বাধ্য হয়েই চালিয়ে যেতে হবে অনশন। ওঁর কি একবারও মনে হল না এরা আরও দু’দিন না খেয়ে থাকবে?’’
আর এক অনশনকারী স্নিগ্ধা হাজরা বলেন, ‘‘অনশনের চতুর্দশ দিনে শারীরিক অবস্থা কেমন হয় বুঝতেই পারছেন। পাশের বেডের অনশনকারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে মানসিক অবস্থা কেমন হয় বুঝতেই পারছেন। আট জন অনশনে বসেছি বলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে?’’
আরেক অনশনকারী আলোলিকা ঘোড়ুই বলেন, ‘‘ইমেল করে আগেও আমরা দাবিগুলি জানিয়েছি। এখানে অনশনে বসার আগেও ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। আমাদের সব সহকর্মী কাজে ফিরেছেন। শুধু আমরা আট জন কাজ করছি না, যারা অনশনে বসে আছি। আমরা বাধ্য হয়েছি এই সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন