একদিকে, বনধ রোখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে ধর্মঘটের দিনক্ষণ পরিবর্তন করেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। কিন্তু, তারপরেও কিছু প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। আর, সেই প্রশ্ন নিয়েই যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষের মুখোমুখি হয়েছিল পিপলস রিপোর্টার।
পিপলস রিপোর্টার: আপনারা সরকারী কর্মচারী। ধর্মঘট কেন ডাকলেন?
ভাস্কর ঘোষ: দেখুন, ‘বকেয়া ডিএ’র দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি, কর্মবিরতি হয়েছে। আমরা যখন কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলাম, তখনই বলেছিলাম সরকার যদি আমাদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল না হয়, আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আমরা ধর্মঘটের দিকে যাব। সে কারণেই আমরা ১০ মার্চ ধর্মঘটে যাচ্ছি।'
পিপলস রিপোর্টার: ৯ তারিখ ধর্মঘট ডেকেছিলেন, হঠাৎ দিনক্ষণ পরিবর্তন?
ভাস্কর ঘোষ: আমরা জানতে পেরেছি, ৯ মার্চ মাদ্রাসার বোর্ডের একটি পরীক্ষা আছে। তাই, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, ধর্মঘটের তারিখ পরিবর্তন করে ১০ তারিখ করেছি আমরা। সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পিপলস রিপোর্টার: পরীক্ষার দিন ধর্মঘট ডাকার কি কোনও ইতিহাস আছে এ রাজ্যে?
ভাস্কর ঘোষ: ২০০৮ সালে, বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন উনিও (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কিন্তু বনধ ডেকেছিলেন। সেমসয় উচ্চ-মাধ্যমিক কাউন্সিলের পরীক্ষা ছিল। ওঁর বনধের জেরে সরকারকে পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। পরে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের এক দিনে দুটি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
পিপলস রিপোর্টার: সরকারী কর্মচারী হিসাবে সরকারের বিরুদ্ধে কি ধর্মঘট ডাকতে পারেন আপনারা?
ভাস্কর ঘোষ: ‘ডিএ আমাদের ন্যায্য পাওনা, কোনও ভিক্ষা নয়। আর, যদি বনধ-এর কথায় আসেন, তাহলে বলবো, ধর্মঘট রাজ্য সরকারী কর্মীদের আইনি অধিকার। আমাদের যে সার্ভিস রুল (Service Rule) আছে, সেই সার্ভিস রুল অনুযায়ী ধর্মঘট আমাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।
আমাদের সার্ভিস রুলে বলা আছে, আমাদের সঙ্গে হওয়া যে চুক্তি, সরকার সেই চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু, সেই চুক্তি সরকার ভঙ্গ করছে। সরকার সেই চুক্তি ভেঙেছে আমাদের মহার্ঘ ভাতা’ (DA) না মিটিয়ে। সেই পরিপেক্ষিতে আমাদের অধিকার আছে, ধর্মঘট করার এবং তা আইন সংগত। যা আমাদের সার্ভিস রুলের মধ্যেই দেওয়া আছে।
পিপলস রিপোর্টার: মুখ্যমন্ত্রী বলছেন বনধ করতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে আপনি কি বলবেন?
ভাস্কর ঘোষ: বনধের রাজনীতিটা তো উনি বেশি করেছেন বিরোধী নেত্রী থাকার সময়। তারপর যখন ক্ষমতার এলেন, কর্পোরেট কালচার ধরলেন। এখন উনি বনধের বিরোধিতা করছেন।
কিন্তু, যে রাজ্যে কর্মচারীদের আইনি অধিকারগুলি খর্ব করা হয়েছে, সেখানে বনধে যাওয়া ছাড়া তো আর কোনও উপায় নেই। আমরা বহুরকম ভাবে, বহুবার বার্তা দিয়েছি। ২৭ দিন ধরে আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ওঁর (মমতার) যদি অন্য কোনও পথ জানা থাকে তাহলে উনি বলুন। মুখ্যমন্ত্রী তো আলোচনায় ডাকতে পারতেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারতেন। কিন্তু, উনি তো সেটা করেননি।
পিপলস রিপোর্টার: বনধ তাহলে হবে? কারা আছেন আপনাদের পাশে?
ভাস্কর ঘোষ: বনধ হবে ১০ তারিখ। আজকে তার নোটিশ যাচ্ছে সরকারের কাছে। এই ধর্মঘটে সব কর্মচারী সংগঠন সামিল হবে। বাম, কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলের কর্মচারী সংগঠনগুলি এক মঞ্চে এসে ১০ তারিখ এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন