সম্প্রতি বাংলা আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কিন্তু তারপর থেকেই এই ঘটনাকে ঘিরে বির্তক তৈরী হয়েছে সোস্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সাহিত্য মহলে। রাজনীতি থেকে সাহিত্যবিদদের মধ্যে প্রশংসার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনাও করেছেন অনেকে। সেই কারণেই, দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলা আকাদেমির সভাপতি তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
ব্রাত্য বসু বলেন, "এটা একমাত্র বাঙালিদের একটা অংশই করতে পারে! তাই বলতে ইচ্ছে করছে, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। অ-বাঙালিরা এমন করতেন না।’
মুখমন্ত্রীর আকাদেমি পুরস্কারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি থেকে পদত্যাগ করেছেন সাহিত্য আকাদেমির বাংলা ভাষা বিষয়ক তথা উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস। নিজস্ব চিঠিতে মূল ঘটনার কথা না বললেও তিনি লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কলকাতায় বাংলা কবিতা আক্রান্ত!’ এ সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলা সাহিত্য জগতে পক্ষপাতিত্ব, যথেচ্ছাচার দেখে তিনি সাহিত্য আকাদেমির কলকাতা অফিসের সংস্রব ছাড়তে চেয়েছেন বলেই জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনার জেরে বাংলা আকাদেমি থেকে প্রাপ্ত ‘অন্নদাশঙ্কর রায় স্মারকসম্মান’ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিখ্যাত গল্পকার ও লোক-সংস্কৃতি গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে ওঁনার বক্তব্য, "তোল্লাই দেওয়ার একটা সীমা থাকা দরকার। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) ভাল প্রশাসক হতে পারেন, কিন্তু এই সম্মানের যোগ্য নন। আবারও বলছি, এই সম্মান নেওয়া তাঁর উচিত হয়নি।" রত্নাদেবীর বক্তব্যের পর সরকারি মহলের এক আধিকারিক প্রশ্ন তোলেন যে পুরস্কার প্রাপ্ত ১০ হাজার টাকা নিয়ে উনি কি করবেন, তখন রত্না দেবী আরও জানান, পুরস্কারপ্রাপ্ত ১০ হাজার টাকাও তিনি ফিরিয়ে দেবেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলা আকাদেমির অন্যতম সদস্য সুবোধ সরকার বলেন, "এটা ওঁর অভিরুচি!" তাঁর কথায়, "এটি ত্রিবার্ষিক সম্মাননা, যা পাবেন এমন এক জন সাহিত্যিক, যিনি সামগ্রিক সমাজকল্যাণে ও পরিবর্তনে ভূমিকা নিয়েছেন। ১১৩টি গ্রন্থের লেখক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম সবার আগে উঠে এসেছে বিচারকমণ্ডলীর কাছে। এটা অনেকটা ম্যাগসাইসাইয়ের মতো। যাঁরা সারা বছর কুৎসা করেন, তাঁরাই মিম বানাচ্ছেন। থ্রেট দিচ্ছেন।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী আকাদেমি পুরস্কার পাওয়ার পর সোস্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শোরগোল ওঠায় তাতে সুর মিলিয়ে তসলিমা নাসরিন লেখেন, "খুনী, ডাকাত, চোর, বদমাশ নির্লজ্জ হলে মানায়। যখন শিল্প-সাহিত্যের জগতের লোকেরা নির্লজ্জ হয়, তখন সেই সমাজ নিয়ে সামান্যও আশা করার কিছু থাকে না। ভাল যে, ওই শহরে (কলকাতা) আমি আর বাস করি না৷ বাস করলে, হতাশার অতল গহ্বরে আমাকেও তলিয়ে যেতে হতো।"
সমাজমাধ্যমেই বাংলা কবিতা বা সাহিত্য অনুরাগীদের প্রশ্ন, তাহলে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা নিয়েও আলোচনা করুন, আকাদেমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কবিরা। সুবোধ সরকার বলছেন, “তা হতেই পারে! কিন্তু মনে রাখতে হবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বীকৃতি শুধু কবিতার জন্য নয়!”
বাংলা আকাদেমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ বলছেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী পুরস্কার পেতে পারেন! উইনস্টন চার্চিল সাহিত্যে নোবেল পান! দোষ হয় মমতা বন্দ্যোধ্যায়ের বেলা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন