এবার খাস কলকাতায় ঘটল গণ ধর্ষণের ঘটনা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন এই ঘটনা সামনে আসতে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ধর্ষণের অভিযোগ প্রথমে নিতে না চাওয়া এবং লঘু ধারায় মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কলকাতা কর্পোরেশনের এক মেয়র পারিষদের পুত্রকে এই ঘটনা থেকে বাঁচাতেই তৎপর শাসক দল ও পুলিশ প্রশাসন। ওই মেয়র পারিষদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলেও জানা গেছে। শুক্রবারই এই ঘটনার প্রতিবাদে পর্ণশ্রী থানার সামনে বিক্ষোভে শামিল হন সিপিআইএম কর্মী সমর্থকরা। থানায় ডেপুটেশনও দেওয়া হয় অভিযুক্তর শাস্তির দাবিতে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ৫ মার্চ বেহালার পর্ণশ্রী থানা এলাকায়। কলকাতা কর্পোরেশনের ১২৯ নম্বর এবং ১৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী এলাকার এক বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় সূত্রে খবর, দুই তরুণীর মধ্যে এক জন শিক্ষার্থী। তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্তদের মধ্যে মেয়র পারিষদের পুত্রও ছিলেন। এরপরে সেদিন রাতেই অভিযোগ জানানো হয় থানায়।
অবশ্য পুলিশ প্রথমে তাঁদের অভিযোগে গুরুত্ব দেয়নি। সামান্য ধাক্কাধাক্কি ও বচসার ঘটনা বলে দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত ওই দুই যুবক জামিনও পেয়ে যায়। এরপরে এলাকার মানুষজন থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। শেষমেষ বৃহস্পতিবার পুলিশ দলবদ্ধ ধর্ষণের ধারা যুক্ত করে মামলা দায়ের করে।
দুই তরুণীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়। তবে তাতে নাম নেই প্রভাবশালী ওই মেয়র পারিষদের পুত্রের নাম। পুলিশের চাপেই সেই নাম বাদ যায় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তের তালিকায় এক নাবালকও রয়েছে। চার জনকে এদিনই আলিপুর আদালতে তোলা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত নাবালককে পাঠানো হয়েছে জুভেনাইল কোর্টে।
গোটা ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিপিআইএম নেতা কৌস্তভ চ্যাটার্জি বলেন, “বেহালার বুকে এমন ঘটনা লজ্জার। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার চেহারা কী, তা তো দেখাই যাচ্ছে। পুলিশ সরাসরি তৃণমূলের মেয়র পারিষদের ছেলেকে আড়াল করতে চাইছে। প্রথমে তো ধর্ষণের অভিযোগই নিতে চায়নি, পরে সাধারণ মানুষের চাপে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ নিয়েছে।“
এরপর রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তোপ উগরে বলেন, “মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনের চেহারা এটাই। নিগৃহীতাকে কার্যত যুদ্ধ করতে হয় অভিযোগ জানাতে গেলে। সিপিআইএমের পক্ষ থেকে থানায় ডেপুটেশন দিয়ে জানিয়ে আসা হয়েছে, বেহালার মানুষ এটা মানবেন না। সন্দেশখালির ঘটনা আসলে ব্যতিক্রম নয়, সর্বত্রই পুলিশের একই চেহারা। আর বিজেপি তো মেকি বিক্ষোভ দেখিয়ে আসলে তৃণমূলের রাস্তাই চওড়া করে দেয়।“
অন্যদিকে, শুক্রবার বিজেপির পক্ষ থেকেও পর্ণশ্রী থানার সামনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে দেওয়া স্লোগান বদলে যায় সিপিআইএমের বিরুদ্ধে। তখন সিপিআইএমের কর্মী সমর্থকরাও পালটা সন্দেশখালি-বেহালার পাশাপাশি হাথরসের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন। এরপরেই কয়েক জন বিজেপি কর্মী চড়াও হয় বামফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকদের উপর। মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পালটা প্রতিরোধের মুখে পড়তে বিজেপি'র লোকজনকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন