হাওড়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রামনবমীর মিছিল ঘিরে অশান্তির প্রতিবাদে হুগলি ও হাওড়ায় দু’দিন ব্যাপী শান্তিমিছিলের ডাক দিয়েছিল সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। আজ হাওড়ার সালকিয়ায় দ্বিতীয় দিনের শান্তিমিছিলে পুলিশি বাধার অভিযোগ উঠল। যার জেরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শান্তিমিছিলের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে।
এদিন বালিখাল থেকে শুরু হওয়া মিছিল সালকিয়া চৌরাস্তায় আটকে দেয় পুলিশ। বিমান বসুর নেতৃত্বে হওয়া শান্তি মিছিল আটকাতেই পুলিশের সাথে খন্ডযুদ্ধ বেধে যায় মিছিলকারীদের। বাম কর্মীদের একটা অংশ পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে এগিয়ে যান। মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় পুলিশের। অন্যদিকে আরেকটি অংশ আটকে পড়েন সালকিয়া চৌরাস্তায়। সেখানেই বাম কর্মীরা বসে পড়ে অবস্থান শুরু করেন।
অবস্থান থেকে সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "বাঙলার বুকে দাঙ্গার সংস্কৃতি আনতে দেব না। যে কোনো মূল্যে আমরা, বামপন্থীরা এই প্রচেষ্টা আটকাবোই। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল পুলিশ আটকেছে। আজকের মিছিল থেকে আমাদের কর্মীরা আরও অঙ্গীকার নিয়ে যাচ্ছেন। এই লড়াই চলছে, লড়াই চলবে। লালঝান্ডা কাঁধে নিয়ে আগামী দিনে আরও বড়ো লড়াইয়ের জন্য বামকর্মীরা প্রস্তুত।"
অবস্থানে বিমান বসু বলেন, এখানে "আমাদের অবস্থান করার কথা ছিল না। বাধ্য হয়ে আমাদের এখানেই অবস্থান করতে হল, কারণ পুলিশ আমাদের আর এগোতে দেবে না। অথচ যেদিন হাঙ্গামা ঘটলো সেদিন পুলিশ তা আটকাতে পারলো না। একটা কথা জ্যোতিবাবু বারবার বলতেন, সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না। সরকার দাঙ্গা চাইলে দাঙ্গা হবেই। বুঝে নিতে হবে ভেতরের অর্থটা কী ছিল। এইভাবে ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে বিভাজন করা আগে ছিলনা।"
তিনি আরও বলেন, বাঙলার ঐতিহ্য ভাষার ঐক্য, ধর্মের ঐক্য। এই বাঙলায় দাঙ্গার কোনো স্থান নেই। আমরা যারা বামপন্থীরা এই বিষয়ে সচেতন। আজ যে ঘটনা ঘটলো তা ঘটা উচিৎ ছিল না। পুলিশের যারা আটকেছে তাঁরা নিজেরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত করেনি। তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। নবান্ন থেকে হয়।
রবিবার কোন্নগরের বাটার মোড় থেকে বালিখাল পর্যন্ত প্রথম দফায় মিছিল হয়। বিমান বসু জানান, গতকালের মিছিলে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু হাওড়ায় সমস্যা হল। অথচ এই মিছিলে কারোর হাতে কোনো অস্ত্র ছিলনা। শান্তি চাওয়াটা অপরাধ নয়। কিন্তু তাদের আটকে দেওয়া হল।
বিমান বসু বলেন, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ৩০ তারিখের ধর্না মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, তিনি একমাস আগে খবর পেয়েছিলেন রামনবমীর দিনে অশান্তি হতে পারে। তাহলে সেদিন কেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবার দিল্লি থেকে যখন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি এল তখন তাদের আটকানো হল। এমন কী কিছু বিষয় আছে যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম গেলে সমস্যা হতে পারে? সরকার নিজেই বাঙলার বদনাম করার ব্যবস্থা নিচ্ছে। আপনারাই বলুন, কবে থেকে তৃণমূল রামনবমী পালন শুরু করল? অথচ জন্মলগ্ন থেকে তো তৃণমূল রামনবমী পালন শুরু করেনি। আজ ধর্মের নামে, ধর্মের কথা বলে, ধর্মের উন্মাদনাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। একে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা উচিৎ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন