২০২১-এর কলকাতা পুরভোট যেন বৈভবের নির্বাচন। মানুষের জীবন যন্ত্রণা ঢেকে গেছে শাসকদলের বিশালাকার কাটআউট, ফ্লেক্স, ব্যানার, হোর্ডিংয়ে। শহরজুড়ে বইছে শুধু টাকা স্রোত। সূত্রের খবর, খরচের সমস্তটাই সিন্ডিকেটের হাতে। গোটা শহরে কয়েকশো সিন্ডিকেট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নির্বাচনী প্রচারের জন্য। সঙ্গে আছে আইপ্যাকের মাস মাইনের কর্মচারীরা।
খরচের একটা হিসেব দেওয়া যাক। বাটাম-সহ ফ্লেক্সের বর্গফুট পিছু খরচ ন্যূনতম ২৫ টাকা। শাসক দলের কাটআউট কুড়ি ফুট বাই ১২ ফুট। অর্থাৎ একটা কাটআউট তৈরিতেই খরচ ৫০০০ টাকা। এরকম বহু কাটআউট ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে গেলে দেখা যাবে কয়েক হাত অন্তর অন্তর তৃণমূল প্রার্থীর বিভিন্ন সাইজের ফ্লেক্স। কোনো কোনো ফ্লেক্সের নীচে সৌজন্যে অন্য কারোর নাম লেখা। ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের তিলজলা এলাকার তৃণমূল কর্মীদের দাবি, সবকিছুর দাম বেড়েছে। বুথ প্রতি ২-৩লক্ষ টাকা খরচ না হলে কলকাতায় ভোট হয় না।
প্রত্যেক ওয়ার্ডে ২৫-৩০টি বুথ থাকে। অর্থাৎ ওয়ার্ড প্রতি প্রায় ৫০ লক্ষ খরচের ধাক্কা। নির্বাচন কমিশন অনুযায়ী ভোটার পিছু ৭৫ টাকা করে খরচ করা যেতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সেই নিয়ন্ত্রণ কই এই পুরভোটে! উঠছে প্রশ্ন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেবের বক্তব্য, এমন প্রচারের বহর অতীতে দেখা যায়নি। এসব কিছু দেখেও দেখছে না নির্বাচন কমিশন।
আলিপুর সার্ভে বিল্ডিং লাগোয়া দোকান। ঝান্ডার ডান্ডা, কাঠের বাটাম, ফ্লেক্সে ব্যবহৃত কাঠামো বিক্রির দোকান। ব্যবসা প্রায় চার দশকের। ৮০ বছরের বৃদ্ধ বললেন, ৩৯ বছরের ব্যবসায় এমন দিন দেখেননি। এত পরিমাণ ঝান্ডার ডান্ডা আগে বিক্রি হয়নি। এমন ভালো ব্যবসাও হয়নি আগে। তাঁর কথায়, এই বাঁশ আসে মূলত আসাম থেকে। এখানে যানজট হয়। নয়তো এক ট্রাক মাল দাঁড় করালে মুহূর্তে সব বিক্রি হয়ে যেত।
শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থীরা জিতলে সিন্ডিকেটের একাংশ উৎসাহিত হয়। এদিকে শহরজুড়ে কাজের আকাল। বেকারত্ব বাড়ছে কলকাতায়। বেকারদের একটা বড় অংশের নাম লেখাচ্ছে সিন্ডিকেটে। শহরের একটা বড় অংশের নির্মাণ সামগ্রীর সিন্ডিকেট যেন তৃণমূলের নির্বাচনী এজেন্টে পরিণত হয়েছে। প্রোমোটার চক্র লিড দিতে পারলে অনিবার্য বিক্রয়মূল্য বাড়বে বস্তি জমিতে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন