আর জি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সিবিআইকে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ছিল তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। মেয়ো রোডের জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে আজকের দিনটি দেশজুড়ে সমস্ত নির্যাতিতা এবং তাঁদের পরিবারকে উৎসর্গ করলেন তিনি। পাশাপাশি, বিধানসভায় আগামী ১০ দিনের মধ্যে ‘ধর্ষকদের ফাঁসি চাই’ বিল পাশ করানোর কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার মেয়ো রোডের জনসভায় ভাষণ দিতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী আজকের দিনটি নির্যাতিতা এবং তাঁদের পরিবারকে উৎসর্গ করে বলেন, ‘‘নির্যাতিতদের উৎসর্গ করছি আজকের দিন। দেশ জুড়ে নির্যাতিতা এবং তাঁদের পরিবারকে উৎসর্গ করছি।’’
এরপরেই সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “আমি পাঁচ দিনের সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু মামলাটি সিবিআইয়ের কাছে চলে যায়। তারা বিচার চায় না। তারা শুধু বিলম্ব চায়। ১৬ দিন হয়ে গেল, বিচার কোথায়?”
আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিধানসভায় ধর্ষকদের শাস্তি নিয়ে বিল পাশ করানোর কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহে স্পিকারকে বলে বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডাকব। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’ এই বিল এনে পাশ করে রাজ্যপালের কাছে পাঠাব।’’
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘আমি জানি রাজাবাবু কিছু করবেন না। যদি তিনি (বিলে সই) না করেন, তবে মেয়েরা রাজভবনে গিয়ে বসে থাকবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকবে। এই বিলে সই করতে হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়ে দায়িত্ব সারলে হবে না। আপনি রাজভবনের এক জন মহিলা কর্মীকে নির্যাতন করেন। সেই মেয়েটা বিচার পায়নি।’’
আরজি কর-কাণ্ডে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। সভা থেকে এমনই জানালেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু তার পরে কী অ্যাকশন নেওয়া হল, যাতে দেরি না হয়, কোনও ভুল ত্রুটি না হয় সেটাই দেখার। আমরা চেয়েছিলাম সাত দিনের মধ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা করে দিতাম।’’
বিজেপির বাংলা বনধ নিয়েও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কীসের বনধ। যদি বনধ করতে হয় তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বন্ধ করো। যিনি আজ পর্যন্ত শুধু এজেন্সি লাগিয়ে মানুষের উপর অত্যাচার করা ছাড়া কিছুই করেননি।’’ অসম, মণিপুর, উত্তরপ্রদেশের উদাহরণ টানলেন মমতা।
বিজেপির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, ‘‘আসল আন্দোলনের মুখ ঘোরানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। আজকে জেনে শুনে বন্ধ ডেকেছে। ওদের বডি চাই। আমরা বিচার চাই, দোষী ব্যক্তির শাস্তি চাই। ওরা আসল আন্দোলনে জল ঢেলে দিয়েছে। বাংলাকে বদনাম করার খেলায় নেমেছে। আমি তাদের ধিক্কার জানাই।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘জুনিয়র ডাক্তাররা যখন দেশ জুড়ে আন্দোলন করছিলেন, আমরা কিন্তু কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিইনি। কারণ আমি মনে করেছিলাম ওঁদের আন্দোলনটা সঙ্গত। ওঁরা ওঁদের বন্ধুর বিচার চাইছে। কিন্তু দিল্লিতে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে দিয়েছিল।’’ এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন