যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে হস্টেলে র্যাগিং-র রমরমা ছিল সেখানে নাকি এসএফআই কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হতো না। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে এমনই তথ্য জানা যাচ্ছে। যদিও শাসকদল তৃণমূলের পক্ষ থেকে ছাত্র মৃত্যু ঘটনায় ক্রমাগত সিপিআইএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-র দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে।
ছাত্র মৃত্যুর পর থেকেই তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতা, এমনকি সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জিও সিপিআইএমকে দায়ী করেছিলেন। রাজ্য তথা দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুরকে 'আতঙ্কপুর' বলে কটাক্ষ করেছিলেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এসএফআইকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও। তিনি বলেন, 'মমতা ব্যানার্জি তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে ছাড়পত্র দিলে একঘন্টার মধ্যে এসএফআইকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।'
কিন্তু ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারাই অন্য কথা বলছে। পড়ুয়াদের দাবি, যে হস্টেলে র্যাগিং হয় সেখানে 'দাদাগিরি' করে ডিএসএফ, ফ্যাস-র মতো স্বাধীন সংগঠনগুলি। সেখানে এসএফআইকে কার্যত 'নিষিদ্ধ' করে রাখা হয়েছিল। এই স্বাধীন সংগঠনগুলির সাথে আবার তৃণমূলের যোগসূত্র উঠে আসছে।
এসএফআই-র তরফ থেকে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসের মধ্যে তৃণমূল সরাসরি না থাকলেও বেশকিছু স্বাধীন সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে। ঘটনা অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য মিথ্যাচার করছে তৃণমূল। কারণ ২০০৯ সালে কলেজ ক্যাম্পাসে মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতো সাংবাদিক সম্মেলন করে সিপিআইএম-র বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের ঘোষণা করেছিলেন। তাকে সাহায্য করেছিল এইসব স্বাধীন সংগঠনের সদস্যরা।
স্বাধীন সংগঠনের অন্যতম নেতা অরিত্র মজুমদার ওরফে আলু বর্তমানে তৃণমূলের সাথে যুক্ত বলেই দাবি করেছে এসএফআই। এই আলু ঘটনার পর থেকেই দক্ষিণ কলকাতার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। ঘটনাচক্রে সেই প্রভাবশালী তৃণমূল নেতাও কিছুদিন আগেও যাদবপুরের তথাকথিত 'স্বাধীন সংগঠন'-এর নেতা ছিলেন।
হস্টেলে থাকা এক এসএফআই কর্মী তথা পড়ুয়ার কথায় - লকডাউনের সময় তাঁর ঘর থেকে সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তার অপরাধ ছিল তিনি এসএফআই করেন। কর্তৃপক্ষ সবই জানতো কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেননি। এসএফআই-র ঘাড়ে এখন মিথ্যা দোষ দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্য রয়েছে বেশকিছু সংগঠনের।
এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, "এই সব সংগঠনের কাজ এসএফআই, সিপিআইএম এবং মার্কসবাদ বিরোধিতা করা। এরা আসলে কেউ বামপন্থী নয়। এরা তৃণমূলপন্থী। এই হস্টেল ডিএসএফের ঘাঁটি। এই ডিএসএফ-র ফাউন্ডার মেম্বার মহিত রায় এখন বিজেপির নেতা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একাধিক নেতা এইসব স্বাধীন সংগঠন থেকে উঠে এসেছে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন