পৌরকর্মীদের প্রতি চরম অবিচার ও বঞ্চনার প্রতিবাদে এবং ১৩ দফা দাবির সমর্থনে ২৪ জুন শুক্রবার কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু ও অন্যান্য নেতৃত্ব।
এদিন সমাবেশের মঞ্চ থেকে বক্তারা রাজ্যের পৌরকর্মীদের দীর্ঘদিনের বকেয়া দাবি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজ্যের মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলিতে কর্মরত স্থায়ী, অস্থায়ী, ঠিকা শ্রমিক কর্মচারী এবং পেনশনারদের নানা সমস্যা ও ন্যায়সঙ্গত কিছু দাবির মীমাংসার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা ও অসহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয়। পৌরকর্মীদের যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরিগত সমস্যা ও দাবির বিষয়গুলি বারে বারে রাজ্য সরকারকে জানানো হলেও আলোচনার মধ্য দিয়ে সম্মানজনক মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে শ্রমিক-কর্মচারী ও পেনশনাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
যৌথ মঞ্চের অভিযোগ, কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলিতে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ক্রমাগত কমলেও শূন্য পদে নিয়োগ করা হচ্ছে না। অস্থায়ী এবং ঠিকা শ্রমিকদের দিয়ে স্থায়ী ধরনের যাবতীয় কাজ করানো হচ্ছে। স্থায়ী/অস্থায়ী ও ঠিকা শ্রমিকরা নাগরিকদের কাছে যাবতীয় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করলেও তাদের অবিচার ও বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। সামান্য বেতন ছাড়া এদের অন্য কোনো সুবিধা নেই। এই অংশের শ্রমিকরা যখন ৬০ বছর বয়সে চাকরি থেকে অবসর নিচ্ছেন তখন তাদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। রাজ্যের অর্থদপ্তর অস্থায়ী, দৈনিক মজুরির ও ঠিকা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বিষয়ক একের পর এক আদেশনামা প্রকাশ করেছে। সর্বশেষ আদেশনামা নং-1033-F(P2) dated 08/02/2019। কিন্তু পৌরদপ্তর থেকে ঐ আদেশনামা কার্যকরী করা হয়নি। ফলে রাজ্য অর্থ দপ্তরের ঘোষিত সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত হাচ্ছেন অস্থায়ী, দৈনিক মজুরির ও ঠিকা শ্রমিকরা।
যৌথ মঞ্চ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ফলে যখন জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি অবিরাম গতিতে হয়েই চলেছে, তখন মূল্যবৃদ্ধির ক্ষতিপূরণ হিসেবে মহার্ঘভাতা পাওয়ার ন্যায়সংগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শ্রমিক কর্মচারীরা ও প্রবীণ নাগরিক পেনশনাররা। এই মুহূর্তে বকেয়া মহার্ঘভাতার পরিমাণ ৩১ শতাংশ। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে বছরে দুবার মহার্ঘভাতা পেতেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। অথচ রাজ্যের বর্তমান সরকার মহার্ঘভাতা না দেওয়ার মনোভাব প্রকাশ করেছে। কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছে ৩ মাসের মধ্যে মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দিতে হবে। বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে কর্মরত অবস্থায় মারা যাওয়া কর্মীর পরিবারের একজন সদস্যের চাকরি পাওয়ার সুযোগ চালু থাকলেও বর্তমান রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তর এক আদেশনামার মাধ্যমে সেই অর্জিত অধিকার/সুযোগ বাতিল করেছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং পৌরসভার শ্রমিক-কর্মচারীরা চাকরী থেকে অবসরগ্রহণের পর গ্র্যাচুইটি ও পেনশন পাবেন এটাই আইনের নির্দেশিকা। কিন্তু কলকাতা কর্পোরেশন সহ বিভিন্ন পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিকরা নির্দিষ্ট সময়ে গ্র্যাচুইটি ও পেনশন পাচ্ছেন না। ফলে পেনশনাররা আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া জরুরি বিভাগের কর্মীদের ছুটি বৃদ্ধি, সাফাই কর্মীদের জন্য যাবতীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা, সকলের জন্য মেডিক্লেম, শূন্যপদ পূরণ, সিনিয়রিটির ভিত্তিতে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রমোশন, পৌর এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে নাগরিকদের যুক্ত করা ইত্যাদি দাবিগুলি-সহ ১৩ দফা দাবি পৌর দপ্তরে পেশ করা হয়েছে।
এদিন সমাবেশ থেকে ভবিষ্যতে বড়ো আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সিটু সম্পাদক অনাদি সাহু বলেন, পৌরকর্মীদের ন্যায়সংগত দাবিগুলির মীমাংসার ক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগহীনতায় রাজ্যের পৌরকর্মীদের মধ্যে তাঁর ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এই সমাবেশ থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে ন্যায়সংগত দাবিগুলির সম্মানজনক মীমাংসা করতে হবে। অন্যথায় রাজ্যের পৌরকর্মীরা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হবেন। দাবি না মানা হলে আগস্ট মাসে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবং মহাকরণে পৌরমন্ত্রীর কাছে সংগৃহীত স্বাক্ষর-সহ দাবিসনদ পেশ করা হবে। ওই দিন শিয়ালদা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মিছিল হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন