রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রাপ্য ডিএ না পাওয়ার অভিযোগ তুলছেন কর্মচারিরা। এরই মাঝে রাজ্য বিদ্যুত্ দফতরের দুই সংস্থা, WBSEDCL ও WBSETCL -এর কর্মীদের আগামী ৬ জানুয়ারীর মধ্যে প্রাপ্য বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি ফের আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল রাজ্যকে।
শুক্রবার উচ্চ আদালতের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। শুনানি চলাকালীন বিচারপতি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলেন, এটা তো কর্মচারিদের কষ্টের মূল্য। কতদিন এইভাবে বঞ্চিত থাকবে তারা? ডিএ কর্মীদের অধিকার। কোনও দয়া নয়, এটা এখন স্পষ্ট। তাই ডিএ দিয়ে কর্মীদের দয়া করছে সরকার, এই ধারণা যেন কেউ মনের মধ্যে পোষণ না করে। আর কর্মীরা আছে বলে প্রতিষ্ঠান আছে। না হলে কোথায় থাকত প্রতিষ্ঠান?
বিচারপতি স্পষ্ট জানান, এটা চলতে পারে না। আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতেই হবে। সুপ্রিম কোর্ট এই ডিএ মেটানো নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। আপনার বিড়ম্বনা বাড়াতে চাই না। তাই লিখিত ভাবে নতুন অর্ডার দিলাম।
শুক্রবার আদালতে বিদ্যুৎ সংস্থার কর্মচারিদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী সৌম্য মজুমদার। সওয়াল চলাকালীন তিনি বলেন, কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া এখনও মেটায়নি সরকার। পাল্টা রাজ্যের পক্ষের আইনজীবী বলেন, আমরা বকেয়া মেটানো নিয়ে আগের রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন জানিয়েছি। আগামী ১৪ ডিসেম্বর তার শুনানি রয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি।
এরপর বিচারপতি মান্থা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা বলছেন রিভিউ পিটিশন করেছেন। কিন্তু রিভিউ পিটিশন করলেই পুরনো নির্দেশ অমান্য করা যায়, এটা কে বলেছে? নতুন আবেদন করলেও আদালতের পুরনো নির্দেশ অগ্রাহ্য করার অধিকার জন্মায় না। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটাতে হবে। সুতরাং তা মেটাতেই হবে।
আদালত সূত্রের খবর, শুনানির শেষে রিভিউ পিটিশনের পরবর্তী শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেন বিচারক। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, ১৪ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী ৬ জানুয়ারি রিভিউ মামলার শুনানি হবে। তার আগে সরকারি কর্মচারিদের বকেয়া ডিএ মেটাতে হবে। ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যদি বিচারব্যবস্থায় ভরসা না থাকে তা হলে অন্য কথা। কিন্তু কর্মীদের বঞ্চিত করা যাবে না।
অন্যদিকে, শুক্রবার রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবিতে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে একটি সমাবেশের ডাক দেয় বাম সমর্থিত সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ সেটেলমেন্ট কর্মচারী সমিতি। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ডিএ-টা হকের দাবি। কেউ দয়া করছে না। বাবু সরকার চালাচ্ছ, মন্ত্রিগিরি করছ, তোলাবাজি করছ। অথচ সরকারি কর্মচারীর ৪ জনের মধ্যে ৩ জন শূন্যপদ! এভাবে ১ জনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে এই টাকা?
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন