রাজ্যের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। এই তালিকায় আছে কলকাতা, যাদবপুরের মতো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ও। আজ রাজ্যপাল টুইট করে যে তালিকা পোস্ট করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে কলকাতা, যাদবপুর ছাড়াও রয়েছে গৌড়বঙ্গ, আলিপুরদুয়ার, বর্ধমান-সহ আরও বেশ কয়েকটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়।
রাজ্য–রাজ্যপাল সংঘাত নতুন কিছুু নয়। প্রায় দিনই কোনও না কোনও ইস্যুতে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক মহলের সংঘাত লেগেই থাকে। কেউ কাউকে সামান্যতম জায়গা ছাড়তে নারাজ। নতুন নতুন অভিযোগ তুলে সংঘাতের তালিকা ক্রমশই বড় হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন রাজ্যপাল।
কী লিখেছেন ধনকর? এদিন তিনি টুইটে লেখেন, ‘অনুমোদন ছাড়াই ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট আদেশ অমান্য করে, আচার্যের অনুমতি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই এই নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগের কোনও আইনি অনুমোদন নেই। দ্রুত প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হতে হবে।’ এই টুইটে রাজ্যের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করেছেন।
এই নিয়ে রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সম্প্রতি রাজ্যপালকে আচার্য পদ থেকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর কথা বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তার পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীকেই রাজ্যপাল করার নিদান দিয়েছিলেন তিনি। গতকালও জিটিএ–কে দুর্নীতির আখড়া, মুখ্যমন্ত্রীর রাজভবনের রাজা বলায় অপমানিত হন বলে টুইট করেন।
সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের তলব করেছিলেন রাজ্যপাল। পদাধিকারবলে রাজ্যপাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির 'ভিজিটর'। কিন্তু তাঁরা কেউ সেই ডাকে সাড়া দেননি। প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে জানানো হয়, বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির জন্য এই বৈঠকে যোগ দিতে পারছেন না। তখন রাজভবনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, সেখানে যেকোনও অনুষ্ঠান যথাযথ কোভিড বিধি মেনে সম্পন্ন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এধরনের বক্তব্য অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয়। তখন রাজ্যপাল হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ইউজিসি দিয়ে তদন্ত করার। যার পাল্টা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রশ্ন ছুড়ে টুইট করেছিলেন, ‘ঔপনিবেশিক রীতি মেনে, রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করার নিয়ম চালিয়ে যাওয়া উচিত, না কি বিশিষ্ট বা শিক্ষাবিদদের এই পদে মনোনীত করা যায়?' তিনি স্পষ্ট লেখেন, 'তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।’
পালটা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, রাজ্যপাল সাংবিধানিক পদকে উপহাস করছেন। টুইটারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কেও ট্যাগ করে লেখেন, 'রাজ্যপালের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত টুইটের মাধ্যমে জানানো হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি টুইট এবং মিডিয়ায় মগ্ন, এটা সবাই জানেন। আপনি সাংবিধানিক পদকে উপহাস করছেন।' বছর শেষে নবান্ন বনাম রাজভবন বিতর্ক নতুন মাত্রা পেল বলে জল্পনা শুরু হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন