ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্তর গ্রেফতারের ঘটনায় রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাই কোর্ট। আগামীকাল সেই রিপোর্ট জমা দেবে রাজ্য। আগামীকাল সকাল ১০:৩০ টায় এই মামলার পরবর্তী শুনানি। বুধবার আদালতে কলতান দাশগুপ্তের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
এদিন আদালতে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করে FIR করে। কার কাছ থেকে পেনড্রাইভ সংগ্রহ করা হয়েছে তার কোনো উল্লেখ নেই। কোনরকম নোটিশও দেওয়া হয়নি।
একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, অডিও ক্লিপে থাকা কথোপকথন কখনই কলতানের সঙ্গে হয়নি। সঞ্জীব দাসের থেকে কোনো ফোন কলতান পাননি। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া যায় যে কলতান দাশগুপ্তের সঙ্গে সঞ্জীব দাসের কথা হয়েছে, তাহলেও যেখানে তিন বছরের কম সাজা রয়েছে সেক্ষেত্রে কি এভাবে গ্রেফতার করা যায় ?
রাজ্যের উদ্দেশ্যে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের প্রশ্ন, “কেউ যদি আমাকে ফোন করেন এবং আমি যদি ফোন ধরি তাহলে যিনি ফোন করেছেন তিনি তার যা ইচ্ছা বলতে পারেন। তার ওপর তো আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি তো ভয় পাচ্ছি, তাহলে কি কোনো অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এলে ধরতে পারব না?”
এদিন আদালতে রাজ্যের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সঞ্জীব দাস জেরায় কলতান দাশগুপ্তর নাম বলে। দুজনের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হয়। দেখা যায় সঞ্জীবের ফোন থেকে কলতানের ফোনে ফোন গেছে। এছাড়াও সঞ্জীবের বয়ানের ভিত্তিতে কলতানকে গ্রেফতার করা হয়। দুজনেই জেরায় তাদের অপরাধ স্বীকার করেছেন। এটা নিম্ন আদালতের নির্দেশনামায় আছে।
এদিন বিচারপতি মন্তব্য করেন সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে গ্রেফতারির পরে, কিন্তু এখানে তো গ্রেফতারিকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। আপনাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে প্রথমে আপনারা সঞ্জীব দাসকে গ্রেফতার করেন। তার বয়ান রেকর্ড করেন। সেখান থেকে কল রেকর্ড খতিয়ে দেখেন এবং তারপর কলকাতা দাশগুপ্তকে গ্রেপ্তার করেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের প্রকাশ করা অডিওর ভিত্তিতে সিপিআইএমের যুব নেতা কলতান দাশগুপ্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নায় হামলার ছক কষা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল নেতা। এই ফোনালাপের একটি অডিও ক্লিপ তিনি প্রকাশ করেছিলেন। (এই অডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস্ রিপোর্টার)। সেই অডিওর ভিত্তিতে গত সপ্তাহের শনিবার ভোরে ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্তকে গ্রেফতার করে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ। ওই অডিও ক্লিপের সঙ্গে কলতানের যোগ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
উচ্চ আদালতে আবেদনের পাশাপাশি এদিনও কলতান দাশগুপ্তের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে সরব হয়েছে ডিওয়াইএফআই। বুধবার উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের নন্দীগছ গ্রামে তিলোত্তমার সুবিচারের দাবীতে ও কলতান দাশগুপ্তের মুক্তির দাবীতে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই পথসভায় বক্তব্য রাখেন - মীনাক্ষী মুখার্জি ও অন্যান্য নেতৃত্ব। অন্যদিকে কলতান দাসগুপ্ত সহ সমস্ত আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে কোচবিহার জেলার আন্দরান ফুলবাড়ী গ্রামে এক মিছিলে অংশ নেন ধ্রুবজ্যোতি সাহা সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
কলতান দাশগুপ্তের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে বলেন, "কমরেড কলতান দাশগুপ্তের বেআইনি ও আক্রোশমূলক গ্রেপ্তারের ঘটনার আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করছি। যে ঘটনাক্রমের মধ্য দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে 'জাস্টিস ফর আরজি কর'-এর দাবিতে ঘটমান গণআন্দোলনকে বদনাম করার অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে।"
ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, "ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষনেত্রী গণআন্দোলনের বিরুদ্ধে আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স অপব্যবহারের কথা বলছেন, অথচ তাঁর দলেরই আইটি সেল ডিপফেক এবং সাজানো ক্লিপ ব্যবহারে পারদর্শিতা দেখাচ্ছে! এটা একজন দৃঢ়চেতা তরুণ রাজনৈতিক কর্মীকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানি এবং সমগ্র আন্দোলনকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মানহানি ছাড়া আর কিছুই নয়।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন