‘কলকাতা ভারতের সবথেকে নোংরা শহর’। সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে পোষ্ট করে এমনই দাবী করলেন ডিএস বালাজী নামের ব্যবহারকারী। কলকাতার কোনায় কোনায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি ওই যুবকের। যুবকের এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত শতাব্দীর আট-এর দশকে শহর কলকাতাকে 'মুমূর্ষু নগরী' বলেছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। যা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার। ডিএস বালাজী নামক ওই যুবক ৫ নভেম্বর নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) কয়েকটি ছবি এবং ভিডিও পোষ্ট করেন। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার ওই যুবক এক্সে লেখেন, 'এটা অনাহারে থাকা কোনও আফ্রিকার শহর নয়, এটা কলকাতা। শিয়ালদহ নামে এক ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনের দৃশ্য এটা। আর একটা বড়বাজারের দৃশ্য। খোলা নর্দমা, সর্বত্র মলমূত্রের গন্ধ। ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছি না। অথচ স্থানীয় বাসিন্দারা একটি নর্দমার উপরে থাকা দোকান থেকে সকালের খাবার খাচ্ছেন।‘
এখানেই শেষ নয়। বাজারের কয়েকটি ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে ওই যুবক লেখেন, 'বিক্রেতারা নর্দমার উপরে বসে জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। আমি ভারতের প্রচুর শহরে ঘুরেছি। কিন্তু কোনও জায়গায় এমন দৃশ্য দেখিনি। যতই গরিব লোক থাকুক বা পরিকাঠামো খারাপ হোক, এরকম কোথাও দেখিনি।' তিনি আরও লেখেন, ‘আপনি যেটা খাবেন, সেটা নর্দমার উপরে, নোংরা মেঝেতে রাখা হয়েছে। লোকজন শুধু ঝামেলা করছেন, গালিগালাজ করছেন এবং যেখানে-সেখানে থুতু ফেলছেন।’
ওই যুবকের আরও অভিযোগ, এখানের বাড়িগুলো দেখে মনে হচ্ছে ভূমিকম্প হলে ভেঙে পড়বে। সারাক্ষণ এত গাড়ির হর্ন বাজছে যে মাথা ধরে যাচ্ছে। উবের বা র্যাপিডো বুক করতে পারছি না। কারণ হলুদ ট্যাক্সিচালকরা তাঁদের মারধর করবেন। আবার শহরের অন্যতম ব্যস্ত জায়গাগুলিতে তাঁরা যান না।' শেষপর্যন্ত দু'গুণ ভাড়া দিয়ে হলুদ ট্যাক্সিতে চড়তে বাধ্য হন বলে দাবি করেছেন ওই যুবক।
কালীঘাট মন্দির নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন ওই যুবক। তাঁর দাবি, 'কালীঘাট মন্দিরের ভিতর কয়েক হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে আমার। মন্দিরের ভিতরে ভিআইপি দর্শনের জন্য পান্ডারা ঘিরে ধরেছিলেন। ওঁরা কয়েন, প্রসাদের মতো জিনিসপত্র বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। এমনকী মন্দিরের ভিতরেও টাকা না দিলে পুরোহিতরা বিরক্ত হয়ে যান।'
সমাজ মাধ্যমে এই পোষ্টগুলো ব্যাপক ভাবে ভাইরাল হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৬৫ লক্ষ মানুষ ওই পোষ্ট দেখেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ওই যুবককে সমর্থন করলেও, অধিকাংশের দাবি, এটা পুরানো কলকাতা। এক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘আপনি পুরানো কলকাতায় গিয়েছিলেন। ভারতের প্রতিটি শহরের পুরানো অংশ রয়েছে যেখানে নতুন পরিকাঠামো তৈরি করা যায় না। সল্টলেক, নিউটাউনে আপনি নতুন এবং পরিষ্কার কলকাতাকে জানতে পারবেন। তবে হ্যাঁ কলকাতা নাগরিক অর্থে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।‘
অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আপনার অভিজ্ঞতার জন্য দুঃখিত। কিন্তু মনে হচ্ছে আপনি বেশিরভাগই পুরানো কলকাতায় ঘুরেছেন। যা একটু নোংরা। আমি এটা স্বীকার করি। সম্ভব হলে ভিক্টোরিয়া, নিউটাউনে যাওয়ার চেষ্টা করুন।‘
আরও এক ব্যবহারকারী লেখেন, ‘আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল সবই কলকাতায়। কলকাতার বাইরের শহর থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছি। আমার শহরের প্রতি আমার ভালবাসা প্রমাণ করার দরকার নেই। তবে আপনি যে দাবি করছেন, তাও উপেক্ষা করতে পারি না।‘
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন