একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি অবিলম্বে দিতে হবে, একশো দিনের প্রকল্পকে দুশো দিনের কাজের প্রকল্পে পরিণত করতে হবে, সব গরীবের ছাদযুক্ত পাকা ঘর, গরীব শ্রমজীবীদের পেনশন, নারী ও পুরুষদের সমকাজে সমবেতনের দাবিতে ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ডাকে সোমবার কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হল খেতমজুরদের সমাবেশ।
সমাবেশে বাংলার খেতমজুরদের দুর্দশা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এ বিজয়রাঘবন সহ অনান্য নেতৃবৃন্দ। তাঁদের প্রশ্ন, নানা প্রকল্পের টাকা চুরি করেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। কিন্তু এর শাস্তি হিসেবে গরীব মানুষদের হকের মজুরি আটকে দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তৃণমূলের চুরির শাস্তি রাজ্যের সাধারণ মানুষকে কেন দিতে হবে? এই অভিযোগ তুলে দুই সরকারের বিরুদ্ধেই জোরদার লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
আগামী ১১ অক্টোবর একশো দিনের বকেয়া মজুরি আদায়ে সারা দেশে আন্দোলন করবে খেতমজুর ইউনিয়ন। বাংলাতেও ওইদিন তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে রাজ্যের সমস্ত শ্রমজীবী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি, দাবি আদায়ের জন্য আইনি লড়াইয়ের কথাও ঘোষণা করলেন নেতৃত্ব।
সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের সহসভাপতি অমিয় পাত্র পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে বলেছেন, “চুরি করছে তৃণমূল। বিজেপি সবই জানে। অথচ নকল ঝগড়া দেখিয়ে খেতমজুরদের টাকা বঞ্চিত করছে কেন্দ্র। আমরা এখানে বকেয়ার দাবিতে এসেছি। এর পরে নবান্নে যাবো। হাই কোর্টেও যাব।’’
তিনি আরও বলেন, “অন্য রাজ্যে যে খুব কাজের সুযোগ আছে এমনটা নয়, আমরা তো একটাই দেশে থাকি। পরিস্থিতি সব রাজ্যে মোটামুটি একই। কিন্তু অন্য রাজ্যে তবুও কিছুটা কাজ আছে। যে কারণে এখান থেকে দলে দলে মানুষ ভিন রাজ্যে যাচ্ছে। সেখানে একটা কাজের জন্য শ্রমিকের দীর্ঘ লাইন। ফলে মজুরি কমছে, নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। দক্ষ নন এমন শ্রমিকদের বহুতল, ব্রিজ তৈরির মত কাজে লাগানো হচ্ছে। যার পরিণতি মৃত্যু, আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর দেখতে পাই। এগুলো যন্ত্রণা আমাদের কাছে। এই সবকিছুর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে আমাদের।“
ইউনিয়নের সর্বভারতীয় সভাপতি এ বিজয়রাঘবন সমাবেশে বলেন, “দিল্লিতে মোদী, এখানে দিদি - দুইজনই গরিব-খেতমজুর বিরোধী। রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো প্রকল্পে দুর্নীতি করেছে তৃণমূলের সরকার। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোদী সরকার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন দিদি দিল্লি যাবেন আন্দোলন করতে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য। এতদিন কি দিদি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েছিলেন?”
ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি তুষার ঘোষ সমাবেশ থেকে খেতমজুরদের আহ্বান জানিয়েছেন, ‘‘নিয়ম মেনে ৪ ক ফর্ম ফিল আপ করো, কাজ চাও। সেই ফর্মের কপি ক্ষেতমজুর ইউনিয়নকে পাঠাও। কাজ না দিলে আমরা মামলা করবো। রাস্তার লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে যাব।’’
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এবং সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ঈশ্বরের দূত বলে দেখাতে চাইছেন। রাজা-প্রজার সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে চাইছে। ইংরেজকে তাড়ানো হয়েছিল গ্রামের গরিব মানুষের অভ্যুত্থানে। শ্রমিক কৃষকের আন্দোলনে। বাবুদের লোক দেখানো আন্দোলনে নয়। সেই মানুষই দেশের শাসক ঠিক করবে।“
মুড়ি এবং ভেজা ভাত সম্বল করে বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ এসেছিলেন এদিনের সমাবেশে। সমাবেশে আসা এক ব্যক্তি পিপলস রিপোর্টারকে জানান, "আমার ১৫ হাজার টাকা বাকি আছে। বেশিরভাগ মজুরদেরই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বাকি আছে। টানা কয়েকমাস মজুরি পাননি এমন খেতমুজরও আছে। এই টাকা আমাদের অবিলম্বে দিতে হবে। এছাড়াও আমাদের পেনশনের ব্যবস্থা করতে হবে।"
গত সপ্তাহে কৃষক সমাবেশের পরে ক্ষেতমজুর সমাবেশের এই ভিড় লোকসভা ভোটের আগে সিপিআইএম কর্মীদের মনোবল বাড়িয়েছে। এছাড়াও এদিনের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদক নিরাপদ সর্দার, সংগঠনের নেত্রী বন্যা টুডু।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন