নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় নয়া মোড়। বৃহস্পতিবার, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষকে খুব দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। দুজনকেই একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করুক সিবিআই - ইডি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, গত ২৯ মার্চ একটি সভায় যে বক্তব্য রেখেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তার সঙ্গে কুন্তল ঘোষের বয়ানের সাযুজ্য আছে। কুন্তল ঘোষ সেখান থেকেই এই অভিযোগের বয়ান লেখার সূত্র পেয়েছিলেন কিনা, তার জন্য তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি।
গত মঙ্গলবার, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ইডি ও সিবিআই-য়ের উপর চাপ বাড়াতে হেস্টিংস থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ। তিনি দাবি করেন, এই দুর্নীতিতে অভিষেক ব্যানার্জি সহ তৃণমূলের সিনিয়র নেতাদের নাম দেওয়ার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি।
গত ২৯ মার্চ, শহিদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেন, সারদা মামলায় হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনাচক্রে, কুন্তলও তার পরে একই অভিযোগ করেন।
শুধু অভিষেক – কুন্তলকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের ছাড়পত্র নয়, দুর্নীতির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
ইডির আইনজীবীকে প্রশ্ন করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘কী করছেন আপনারা? এরা (কুন্তলরা) তো দালাল, কমিশন নিয়েছে। আসল টাকাটা কোথায় গেল? সেটাই তো খুঁজে বের করতে হবে। কী করছে সিবিআই-ইডি?’
এরপরেই তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যের একাধিক মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করে তদন্ত করছে পুলিশ। লালন শেখের মামলাতেও তদন্তে যুক্ত নেই এমন আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এটা এখন অভিযুক্তদের গতে বাঁধা ছক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এদিনের নির্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'আদালতের অনুমতি ছাড়া নিয়োগ দুর্নীতি মামলার ED - CBI এর কোনও আধিকারিকের বিরুদ্ধে রাজ্যের কোনও থানায় FIR করতে পারবে না পুলিশ। এমনকী কুন্তল ঘোষের অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না নিম্ন আদালত ও পুলিশ।'
এদিন তিনি বলেন, ‘ইডি, সিবিআই এখন এই দুর্নীতির কোমর অবধি পৌঁছেছে। হৃদয় এবং মাথা পর্যন্ত পৌঁছানো এখন বাকি আছে। অল্প সময়ের মধ্যে মাথা পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। আপনারা সময় নষ্ট করছেন। দ্রুত করুন। আপনাদের দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন কেন?’
গতকাল বুধবার, এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'এটি একটি বিপজ্জনক প্রবণতা। তদন্তকারী অফিসারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এগুলি তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করার স্পষ্ট প্রয়াস। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এটি বন্ধ করতে হবে। এই ধরনের অতি স্মার্ট প্রচেষ্টা বরদাস্ত করা যায় না।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন