জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন আজ একাদশ দিনে পড়েছে। তাঁদের অনশনের সমর্থনে মঙ্গলবার জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস ডাক দিয়েছে ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ –এর। প্রথম থেকেই এই দ্রোহের কার্নিভালকে সমর্থন করছেন বাম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। আর এবার জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশনের প্রেক্ষিতে সরাসরি আলোচনায় বসার দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
যদিও রবিবার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তাঁরা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে পাশে চায় না। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা তার পরেও চিকিৎসকদের দাবির পক্ষে সরব হওয়া অব্যাহত রাখছেন। অন্যদিকে, এখনও পর্যন্ত আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আলোচনা হচ্ছে মূলত মুখ্যসচিবের মাধ্যমে। বিমান বসু সোমবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে বামফ্রন্টের দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আপনাকে অনতিবিলম্বে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।“
বিমানবাবু চিঠিতে লিখেছেন, “জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবি এখনই সমাধান করতে হবে। ইতিমধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতিজ্ঞাপক কর্মসূচি নিয়েছেন। এই ভাবে দিনের পর দিন ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্বিকার থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া যাবে না।“ বিমানবাবুর বক্তব্য, “আশা করি, আপনি এখনই সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।“
অন্যদিকে, বিমান বসুর দাবি প্রসঙ্গে পাল্টা মন্তব্য করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ। কুণাল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চে গিয়েছিলেন। নবান্নে, বাড়িতে ডেকেওছিলেন।“ তাঁর কটাক্ষ, “বিমান বসুর এই চিঠি সম্ভবত জ্যোতি বসুর জমানায় লেখা! কিন্তু জ্যোতিবাবু তখন কথা শোনেননি। চিকিৎসকদের পিটিয়ে ধর্না তুলে দিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মতো লাঠি চালাননি।“
চিকিৎসকদের ডাকা ‘দ্রোহের কার্নিভাল’ সমর্থন করছে নানা নাগরিক মঞ্চ, রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। এই নিয়ে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “চিকিৎসকদের আহ্বানকে সর্বতোভাবে সমর্থন করছি। সরকার মূক ও বধির হয়ে আছে, নিষ্ঠুরতার উৎসব করছে। মুখ্যমন্ত্রী চাইলে উদ্যোগী হয়ে এই জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে নিয়ে বসতে পারতেন। তিনি তা করেননি। এখন প্রতিবাদের উৎসব হচ্ছে।“
অন্যদিকে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারের এই পুজো কার্নিভাল বয়কট করেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কার্নিভাল বয়কট করার কথা বলছি। কারণ, আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে দুর্গাপুজোয় কোথাও কার্নিভালের কথা নেই।“ এমনকি মঙ্গলবার মশাল, শঙ্খ, জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিলের ডাক দিয়েছেন তিনি। শুভেন্দু জানিয়েছেন, “সচেতন নাগরিক কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত একটি মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন। পুলিশ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার পর্যন্ত অনুমতি দিয়েছে। সেখানে আমরাও থাকব, পতাকা ছাড়া। মশাল, শঙ্খ, জাতীয় পতাকা নিয়ে থাকব।’’
এদিকে অনশনরত চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে বিমান বসু ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্ধেন্দু সেন, আশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাবীন রায়চৌধুরী, সব্যসাচী চক্রবর্তী-সহ সমাজের বিশিষ্ট জনেরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন