এবার থেকে সিসিটিভির তত্ত্বাবধানে হবে ডাক্তারি পরীক্ষা। পরীক্ষার লাইভ স্ট্রিমিং বা সরাসরি সম্প্রচারও করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই সম্প্রচার দেখতে পাবেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা আনতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এরকম একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট। তবে এটা কতটা কার্যকরী হবে, সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
গত ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্ন সভাঘরে বৈঠক করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। সেখানে পরীক্ষায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধি ডঃ অনিকেত মাহাতো বলেছিলেন, থ্রেট কালচারে যাঁরা অভিযুক্ত, সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা হলে তাঁরা কেউ ১০ পাওয়ারও যোগ্য নন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আভাস দিয়েছিলেন, পরীক্ষায় আর ‘ঘাড় ঘোরাতে’ দেওয়া হবে না। এরপর গত ৩০ অক্টোবরের বৈঠকে ডাক্তারদের পরীক্ষায় কড়াকড়ি নিয়ে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলি বৃহস্পতিবার লিখিত আকারে প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভির নজরদারি। প্রতিটি পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ আলাদা আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। তিনদিনের মধ্যে ফুটেজগুলো না পাঠালে সংশ্লিষ্ট কলেজে পরীক্ষার ফলঘোষণা স্থগিত করে দেওয়া হবে। ফুটেজগুলো অন্তত এক বছর সংরক্ষণ করে রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
পাশাপাশি, ডাক্তারদের পরীক্ষার লাইভ সম্প্রচার হবে। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই একমাত্র সেই সম্প্রচার দেখা যাবে। পরীক্ষার হলে বসে কেউ যাতে কোনও অসৎ উপায় অবলম্বন করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই এই বন্দোবস্ত হচ্ছে।
এছাড়া পরীক্ষকরা শৌচালয়ে গিয়েও পাহারা দেবেন। পরীক্ষা চলাকালীন হল থেকে বেরিয়ে শৌচালয়ে গিয়ে কেউ যাতে নকল করতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।
পরীক্ষার একদিন আগে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে রাখবেন কর্তৃপক্ষ। সেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর সময়ে শুধু অধ্যক্ষ, ডিরেক্টর বা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত আধিকারিক উপস্থিত থাকতে পারবেন। এছাড়া ছাপানোর প্রক্রিয়াও হবে সিসিটিভির নজরদারিতে। পরীক্ষার দিন সিসিটিভির তত্ত্বাবধানেই খোলা হবে প্রশ্নপত্র।
পাশাপাশি, পরীক্ষার পর্যবেক্ষক, পরীক্ষক, সেন্টার ইনচার্জদের নিয়োগ এবং তাঁদের কাজ নিয়েও কড়া নির্দেশিকা দেওয়া হবে। পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে কঠোর তল্লাশি করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যায় মোতায়েন করা হবে পুলিশকর্মী। পরীক্ষার পর খাতা দেখা, নম্বর ওয়েবসাইটে আপলোড করা, রিভিউ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও যথাযথ নিয়ম মানতে হবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের।
পরীক্ষা নিয়ে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার আর জি করের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। সেখান থেকে বেরিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দেবাশিস হালদার জানান, “এই বিষয়টি তিনি নবান্নের বৈঠকেও বলেছিলেন। ফেল করার মতো ডাক্তারি পড়ুয়া আমরাও চাই না। যাঁরা পরীক্ষায় ১০ পাওয়ার যোগ্য, তাঁরা যেন ১০০ না পেতে পারেন। এটি যদি সত্যিই সরকার করতে পারে, তা অবশ্যই ভাল। শুনেছি একটি কমিটি গঠন হয়েছে। সেই কমিটি যদি এই কাজ করতে পারে, তবে অবশ্যই ভাল হবে।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন