পলাশীপাড়া কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক ড: মানিক ভট্টাচার্যকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে অবিলম্বে সরানোর নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে জাল নথি পেশ করার অভিযোগ উঠেছে।
আদালতের তরফে আরও জানানো হয়েছে যে, আগামী মঙ্গলবার দুপুর ২টোর মধ্যে মানিক ভট্টাচার্যকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওইদিন আদালতে উপস্থিত থেকে মানিকবাবুকে বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
সোমবার আদালত জানিয়েছে, ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। পর্ষদ সেই নথি পেশ করেনি এবং আদালতকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে। ২০১৭-র বদলে ২০২২-এর নথি জমা দেওয়া হয়েছে। যার সম্পূর্ণ দায় পর্ষদ সভাপতির। এদিন আদালতে যে নথি দেওয়া হয় তাতে ২৭৮৭ জন আবেদনকারীর একজনেরও পুনর্মূল্যায়নের জন্য দাখিল করা আবেদনপত্র আদালতে পেশ করা হয়নি। এছাড়াও ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর ২৭৩ জন প্রার্থীকে অতিরিক্ত ১ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি জানানো হয়েছে, এদিন পেশ করা সমস্ত নথি ফরেনসিক তদন্তের জন্য দিল্লিতে পাঠানো হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “২০১৭ সালে স্বাক্ষর করা পর্ষদ এবং বিশেষ কমিটির বিভিন্ন নথি এখনও কীভাবে এত স্পষ্ট এবং উজ্জ্বল, সে বিষয়ে এই আদালত সন্দিহান। তাই ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজন।” আদালতের পেশ করা ২৭৮৭ জনের নাম এবং রোল নম্বরের তালিকা, নম্বর পুনর্মূল্যায়নের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির সদস্যদের নাম এবং গঠনের দিন সংক্রান্ত নথি, বিশেষ কমিটির রিপোর্ট, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সিদ্ধান্ত এবং বোর্ডের অনুমোদন সংক্রান্ত নথির প্রিন্ট আউট কবে নেওয়া হয়েছে এবং তাতে যে স্বাক্ষর আছে তাই বা কবে করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখবে ফরেনসিক।
আদালতের নির্দেশের পর সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, “মানিক ভট্টাচার্যের আমলের টেট-নিয়োগ দুর্নীতি সবারই জানা। এটা তো আর লুকোছাপা নেই। এতদিন তিনি পর্ষদের সভাপতি রয়েছেন সেটাই আশ্চর্যের। অপসারণ করে লাভ হবে না। কোমরে দড়ি পরিয়ে এঁদের হাজতে ঢোকাতে হবে।”
এর আগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সিবিআই সূত্রের খবর, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যেই পর্ষদ সভাপতিকে অপসারণের নির্দেশ দিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ।
সোমবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, যতদিন পর্ষদের সভাপতির পদে নতুন লোক নিয়োগ না করা হচ্ছে ততদিন পর্ষদ সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচী সভাপতির দায়িত্ব সামলাবেন। আপাতত এই পদে অন্য কাউকে নিয়োগ করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাতালিকায় অনিয়মের অভিযোগে ৬৮ জনের নাম সহ হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন রমেশ আলি নামের এক ব্যক্তি। যারা কেউ পাশ করেনি। তাঁর অভিযোগ, প্রায় ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে ৪২ হাজার প্রার্থীকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে যে দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে অনিয়ম আছে।
মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত আদালতকে জানিয়েছেন, বেআইনিভাবে দ্বিতীয় প্যানেল প্রকাশ করার আসল উদ্দেশ্য ছিল অতিরিক্ত প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে যে প্রাথমিক টেট বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০১৫-র ১১ অক্টোবর। মেধাতালিকা তৈরি হয়েছিল ২০১৬ সালে এবং নিয়োগ শুরু হয়। সেই মেধাতালিকাতেও অনেক বেনিয়মের অভিযোগ। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় মেধাতালিকা। তার ভিত্তিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গত সোমবার ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের তরফে ওই ২৬৯ জনের বেতন বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা আর স্কুলে প্রবেশ করতে পারবেন না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন