তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনল ইডি। ৬ বছর আগে মারা গেছেন এমন ব্যক্তির সাথেও রয়েছে মানিকের স্ত্রীর জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট! শুধু তাই নয়, সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
আর্থিক তছরূপ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ইডি হেফাজত শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার অপসারিত পর্ষদ সভাপতিকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয়। সেখানেই ইডির আইনজীবী একাধিক গুরুতর অভিযোগ তোলেন মানিকের বিরুদ্ধে। তাঁকে ফের জেল হেফাজত দেওয়ার আবেদন জানান তাঁরা।
এদিন (মঙ্গলবার) মানিকের বিরুদ্ধে ইডির তরফে আদালতে মূলত যে অভিযোগগুলি আনা হয়েছে :-
১) একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কে মানিকের স্ত্রীর সাথে মৃত্যুঞ্জয় নামের এক ব্যক্তির জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে। ২০১৬ সালে এই অ্যাকাউন্টের ফার্স্ট হোল্ডার মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যু হয়েছে। অথচ, তারপরেও ৬ বছর ধরে নিয়মিত লেনদেন চলত, বিনিয়োগ হত অন্য জায়গায়।
২) পুরো প্রক্রিয়াটি অপারেট করতেন বিধায়কের স্ত্রী। ইতিমধ্যেই জয়েন্ট অ্যাকাউন্টটি থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩ কোটি টাকা। বেশিরভাগ ব্যক্তিকেই মানিক তাঁর আত্মীয় বলে দাবি করেছেন। যারা ওনার আত্মীয় নন।
৩) সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল বিধায়কের নামে-বেনামে একাধিক সম্পত্তি সহ ১৩ কোটি টাকা এবং একাধিক জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে তাঁর স্ত্রী, পুত্রের নামে। মানিকের ছেলের ২ টি সংস্থায় ঘুরপথে ঢুকেছে কোটি কোটি টাকা। প্রশিক্ষণ ব্যবসায় খোঁজ মিলেছে ৫ কোটি ১১ লাখের।
৪) ইডির দাবি, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই চলত এই কারবার। মৃত বা সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা ব্যক্তিদের নাম, নথিপত্র দিয়ে খোলা হয়েছিল জয়েন্ট অ্যাকাউন্টগুলি। মূলত প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের টাকা রাখা হত সেখানে। কোটি কোটি টাকার লেনদেন চলত সেখান থেকে।
৫) গত ২২ জুলাই মানিকের বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে যে সিডি উদ্ধার হয়েছে, সেখানে মিলেছে প্রায় ৪ হাজার পরীক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বরের তালিকা। প্রাথমিকের প্যানেল লিস্ট খতিয়ে দেখা গেছে, কম্পিউটারের দুটি ফোল্ডারে নাম থাকা ৬১ জনের মধ্যে ৫৫ জনেরই চাকরি হয়েছে টাকার বিনিময়ে।
৬) এই ৪ হাজার পরীক্ষার্থীরা হলেন ২০১৪ সালের প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে আড়াই হাজার প্রার্থীকে বেআইনিভাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।
৭) রাজ্যের প্রায় ৬০০টির বেশি ডিএলএড, বিএড কলেজের ছাত্র-ছাত্রী পিছু অতিরিক্ত ৫০০০ টাকা করে নিতেন মানিক ভট্টাচার্য। ইডির দাবি, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইনে ভর্তি হতে পারেনি অফলাইনে তাঁদের থেকে এই টাকা নেওয়া হত।
৮) ২০১৮-২২ সাল পর্যন্ত এই অফলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলেছে। এমনকি, হবু শিক্ষকদের কাছ থেকেও মাথা পিছু ৫ হাজার টাকা নিতেন তৃণমূল বিধায়ক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন