ক্ষমতার অলিন্দে থাকাকালীন কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি, প্রতিটি কুকর্মে তাঁকে সাথ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। বুধবার আদালতে চার্জশিট পেশ করে এমনই বিষ্ফোরক অভিযোগ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
আদালতে ইডির দাবি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার বহু আগে থেকেই পার্থ এবং মানিক পরস্পরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সরকারি ছাড়পত্র ছাড়া সাধারণত বেসরকারি কলেজ চালানো যায় না। কিন্তু তার জন্য বিভিন্ন কলেজকে যে আর্থিক মাসুল গুনতে হয়েছে, সেই পরিমাণ দেখে কার্যত হতবাক গোয়েন্দারা।
ইডি আধিকারিকরদের মতে, বেসরকারি বিএড কলেজগুলির ছাড়পত্র পাইয়ে দেওয়ার জন্য ৮ লক্ষ টাকা করে নিতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, বেসরকারি ডিইএলএড কলেজগুলি চালানোর জন্য ছাড়পত্রের বিনিময়ে কর্তৃপক্ষের থেকে ৬ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নিতেন মানিক ভট্টাচার্য। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতি পদে পদে পার্থকে সাথ দিয়েছেন মানিক।
বুধবার আদালতে চার্জশিট পেশ করার সময় ইডি আধিকারিকরা আরও জানান, রাজ্যে বেসরকারি বিএড কলেজের সংখ্যা প্রায় ৬৫৪টি। তাদের শুধু ছাড়পত্র দিয়ে কী পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল, সেই হিসাবও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএড কলেজের টাকা পার্থের নামে এবং ডিইএলএড কলেজের টাকা মানিকের নামে জমা হয়েছিল।
মন্ত্রী, বিধায়ক, পর্ষদ সভাপতি পদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবৎ বেসরকারি বিএড এবং ডিইএলএড কলেজ কর্তৃপক্ষের সংগঠনকে ‘সেফ প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন পার্থ-মানিক। ওই সংগঠনের সভাপতি তাঁদেরই ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। চার্জশিটের প্রতিটি ধাপে তাঁর নামের উল্লেখ রয়েছে বলেই দাবি ইডির।
ইডির জেরায় তাপস জানান, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটে ৩২৫ জন প্রার্থীকে পাশ করানো এবং চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য ‘ঘোষবাবু’ নামে পার্থ ও মানিকের কোনও এক প্রতিনিধিকে তিন কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। যেসব প্রার্থী টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন বলে চার্জশিটে জানিয়েছে ইডি। পাশাপাশি, সেখানে মানিকের স্ত্রী শতরূপা ঘোষের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বিয়ের পরে যৌথ পরিবারের সংসারে শ্বশুর ও বাপের বাড়ির আত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ ও উপহার ছাড়া কোনও আয় ছিল না শতরূপার। মৃত্যুঞ্জয় নামে মানিকের এক আত্মীয়ের সঙ্গে তাঁর যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কয়েক বার তাঁকে ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে নথিপত্রে সই করিয়ে নেন মৃত্যুঞ্জয়। কিন্তু অ্যাকাউন্টের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কিছুই জানতেন না শতরূপা। ৫ বছর আগে ওই যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলার কয়েক মাস পরেই মৃত্যুঞ্জয় মারা যান। তারপর থেকে মানিকই ওই অ্যাকাউন্টের দেখাশোনা করতেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন