তৃণমূলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সঙ্গে চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক নিয়ে সরগরম নেট দুনিয়া। সেই বিতর্কের আবহেই জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হল “ডাঃ নারায়ণ ব্যানার্জি কোনও চিকিৎসক সংগঠনের কোনও প্রতিনিধি কিনা আমরা জানি না।”
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “তিনি ব্যক্তির এক্তিয়ারে কারো সঙ্গে দেখা করতেই পারেন, কিন্তু জুনিয়ার-সিনিয়র চিকিৎসক ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দৌত্যের অধিকার তাঁকে কেউ দেয়নি। তিনি এমন একজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যিনি প্রতিনিয়ত এই আন্দোলনকে ও তার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও বৃহত্তর জনমণ্ডলীকে অতি কদর্য ভাষায় আক্রমণ করছেন।”
বিবৃতিতে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস জানিয়েছে, “আমরা মনে করি নারায়ণবাবু আন্দোলনের পরিপন্থী ভূমিকা পালন করেছেন। তার এই আচরণকে আমরা সমর্থন করছি না।” এই বিবৃতিতে সই করেছেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ডঃ হীরালাল কোনার ও ডঃ পুণ্যব্রত গুণ।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার মধ্য কলকাতায় এক সংবাদমাধ্যমের অফিসে গিয়ে কুণাল ঘোষের সঙ্গে একঘণ্টা বৈঠক করেন এই চিকিৎসক। যে বৈঠক নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বহু বাম সমর্থক। আবার কেউ কেউ চিকিৎসকের পাশেও দাঁড়িয়েছেন।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বামেদের একাধিক প্রচারসভায় ডাঃ ব্যানার্জিকে বামেদের পক্ষে মত প্রকাশ করতে দেখা গেছিল। এমনকি আরজি করের তিলোত্তমা কান্ডের পরেও তিনি একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের পক্ষে প্রচার করেছিলেন।
গতকাল হঠাৎই কুণাল ঘোষের সঙ্গে চিকিৎসক নারায়ণ ব্যানার্জির বৈঠকের খবর সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়াতে মূলত বাম সমর্থক এবং চিকিৎসকদের আন্দোলনের সমর্থকরা ক্ষোভ উগরে দেন।
গতকাল কুণাল ঘোষের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের খবরে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর রাতের দিকে এক ফেসবুক পোষ্টে ডাঃ নারায়ণ ব্যানার্জি জানান “জুনিয়রদের ভালোর জন্য যা করার করেছি। আমি প্রথমে মানুষ, তারপর ডাক্তার, তারপর আমার রাজনৈতিক সত্ত্বা।”
যদিও তাঁর এই ব্যাখ্যাতেও সন্তুষ্ট নন অনেকেই। তাঁর পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়ে কল্পতরু মণ্ডল নামক এক ব্যক্তি লিখেছেন, “ঠিক করলেন, নাকি ভুল করলেন; সময় উত্তর দেবে। তবে যেন আফশোস না করতে হয়। আর কুণাল ঘোষের মতো একটা নিকৃষ্ট মানুষ জুনিয়র ডাক্তারবাবুদের আন্দোলনকে যেভাবে বার বার কটাক্ষ করেছে, সে কী এমন ভালো করবে বলে আপনার বিশ্বাস? যে লোকটা চোখের জল ফেলে, বলা ভালো কুমীরের মায়া কান্না কেঁদে, মানুষের সহানুভূতি আদায় করার চেষ্টা করে, তার কী এমন করার ক্ষমতা আছে বলে আপনি বিশ্বাস করেন?”
জনৈক প্রসেনজিত রায় ডাক্তার নারায়ণ ব্যানার্জির ওই পোষ্টে জানিয়েছেন, “ডাক্তার সুবর্ণ গোস্বামীর বক্তব্য: ডাক্তার নারায়ণ ব্যানার্জি জয়েন্ট ডাক্তার ফোরাম বা জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের সাথে যুক্ত নন। উনি ব্যক্তিগতভাবে গেছেন। কারও সাথে কথা না বলেই গেছেন।”
যদিও শুক্রবার চিকিৎসকদের সংগঠন স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে ডাঃ নারায়ণ ব্যানার্জি তাদের সংগঠনের কেউ নন। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই বৈঠক ধরে নেওয়া যায়। এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন, চিকিৎসকদের আন্দোলনের মত খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শাসকদলের কোনও প্রাক্তন মুখপাত্রের সঙ্গে বৈঠক করা যায় কি?
প্রসঙ্গত, চিকিৎসকদের আন্দোলনের শুরু থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায়, সংবাদমাধ্যমে এর বিরোধিতা করছেন তৃণমূলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। কখনও কখনও তা শালীনতার সীমা ছাড়াচ্ছে বলেও অভিমত সোশ্যাল মিডিয়াতে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন