পরিবহণ শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফের পথে নামল বামেদের শ্রমিক সংগঠন সিটু (সেন্টার অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন)। ৯ দফা দাবি নিয়ে শুক্রবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে লালবাজার এবং পরিবহণ দপ্তরের উদ্দেশ্যে মিছিল করে সিটু। তবে, মাঝপথেই মিছিলে বাধাদান করে পুলিশ। যদিও সেই বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত দুই জায়গাতেই ডেপুটেশন দেয় সিটু'র দুই প্রতিনিধি দল।
ডেপুটেশনে বলা হয়, "কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি পরিবহণ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা আপনার কাছে সমবেত হয়েছি। বর্তমানে পরিবহণ শিল্প এক সংকটের মধ্যে আছে। প্রতিদিন সরকারি পরিবহণ ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মী কমছে। অস্থায়ী কর্মীদের ন্যূনতম বেতন নেই।
বেসরকারি পরিবহণ ক্ষেত্রে জ্বালানির দাম বাড়ছে। ১৫ বছরের বেশি বয়সের গাড়ি রিপ্লেসমেন্টে সরকারি সাহায্য নেই। মোটর পার্টসের দাম বাড়ছে প্রতিদিন। বেশ কিছু অ্যাপ ক্যাব কোম্পানির শোষণ বাড়ছে। সাথে রাস্তায় পুলিশের হয়রানি। সরকার ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো কথাই বলছে না। একই অবস্থা পণ্য পরিবাহী গাড়ি ক্ষেত্রেও। সব মিলিয়ে পরিবহণ শ্রমিকদের অবস্থা খুবই করুণ। সব বিষয়ে আপনার সাথে আলোচনা করে সমাধান চাই। আশা করি আপনার থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পাবো।"
ডেপুটেশনে যে ৯ দফা দাবির উল্লেখ রয়েছে সেগুলি হল:-
১) জ্বালানির দামের উপর সংগতি রেখে প্রতিবছর যাত্রী ভাড়ার তালিকা সরকারকে ঘোষণা করতে হবে। ২০১৮ সালের নির্ধারিত ভাড়ায় ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব, বাস, মিনিবাস চালানো সম্ভব নয়।
২) ১৫ বছরের বেশি বয়েসের গাড়ি রিপ্লেসমেন্টে সরকারি সাহায্য দিতে হবে। সহজ শর্তে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) অ্যাপ ক্যাব গুলির ক্ষেত্রে এগ্রিকেটর আইন চালু করতে হবে।
৪) সরকারি পরিবহণ ক্ষেত্রে সমস্ত শূন্যপদে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে যারা অস্থায়ী কর্মী আছে তাদের ন্যূনতম বেতন ২৬০০০ টাকা করতে হবে।
৫) সব সরকারি পরিবহণ কর্মীদের পেনশন চালু করতে হবে। চাকরিরত অবস্থায় মৃত সরকারি পরিবহণ কর্মীদের পরিবারের ১ জনকে স্থায়ী চাকরি দিতে হবে।
৬) সরকারি পরিবহণ বাড়াতে হবে। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বিশেষত ট্রাম চালানো বাড়াতেই হবে।
৭) পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বেআইনি সাইটেশন কেস দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৮) প্রাইভেট ফাইনান্সারদের চাপ, দালালরাজ বন্ধ করতে হবে।
৯) যেকোনো পারমিট দেওয়ার স্বচ্ছতা আনতে হবে। (অটোর রুট পারমিট, ট্যাক্সির পারমিট) পলিউশনের নামে গাড়ি ধরে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। আরটিও দপ্তরে আরও স্বচ্ছতার প্রয়োজন।
এদিন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল শুরু হওয়ার পর গণেশ চন্দ্র এভিনিউ ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে আটকানো হয়। সেখান থেকে পুলিশের গাড়িতেই কয়েক জন নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় পরিবহণ দফতরের উদ্দেশ্যে। অন্য একটি প্রতিনিধি দল লালবাজারের দিকে এগোয়। সিটু সদস্যদের দাবি, পুলিশের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও মিছিল করে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছতে দেওয়া হয়নি।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিটু নেতা অনাদি সাহু বলেন, সড়ক নিরাপত্তার নামে যে আইন রয়েছে, অবিলম্বে তা বাতিল করতে হবে। এর ফলে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন গাড়ি এবং বাসের চালক, কর্মীরা। সরকারি বিমার প্রিমিয়ামের অর্থ, জ্বালানির দাম বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে যাত্রী ভাড়া বাড়াতে হবে। সব পরিবহণ কর্মীকে সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন