প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। কলকাতা হাইকোর্টের একের পর এক জোরালো প্রশ্নের সামনে কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়লেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি লপিতা বন্দোপাধ্যায়ের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের একটা বিশেষ অংশকে কেন বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে আদালত। এর জবাবে পর্ষদপক্ষের আইনজীবীরা যে জবাবগুলি দিয়েছিলেন তা কোনওভাবেই কার্যকরী হয়নি। এর পাশাপাশি সিবিআই তদন্তের অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশের ব্যাপারে আবেদন নিয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি আদালত।
আদালতের তরফে যে যে প্রশ্নগুলি করা হয়েছিল সেগুলি হল,
১) ২০১৪ সালের টেট সর্বসাধারণের জন্য ছিল। প্রশ্ন ভুল রয়েছে, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আপনারা নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা সিদ্ধান্ত নিল যে একটি প্রশ্নে ভুল ছিল। তার প্রেক্ষিতে কিছু ব্যক্তিকে আপনারা বাড়তি ১ নম্বর করে দিলেন। আপনাদের কি উচিত ছিল না যে কৃতকার্য এবং অকৃতকার্য নির্বিশেষে সবাইকে বাড়তি ১ নম্বর করে দেওয়া?
২) আপনাদের কি মনে হয় না যে এক্ষেত্রে আপনারা বৈষম্য করেছেন? এই বৈষম্য আপনারা করতে পারেন না। সব প্রার্থীর ১ নম্বর প্রাপ্য বলে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ আদালতের।
৩) ২৩ লক্ষ প্রার্থী ছিল, সেই তুলনায় ২৭৩ খুবই কম একটা সংখ্যা। এই বাড়তি নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলে সিঙ্গেল বেঞ্চের যে পর্যবেক্ষণ ছিল, তা কি খুব ভুল ছিল?
৪) যদি আপনাদের যুক্তি সত্য বলে ধরে নেওয়া হয় তাহলেও, যখনই আপনারা দেখলেন যে প্রশ্নে ভুল রয়েছে, সেই মুহূর্তেই আপনারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাড়তি ১ নম্বর সবাইকে দিতে পারতেন।
৫) যারা ওই ভুল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন, শুধুমাত্র তাদেরই বাড়তি ১ নম্বর দেওয়া হবে। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল?
এই প্রশ্নগুলির উত্তরে পর্ষদপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, সবাইকে বাড়তি নম্বর দিলে লাভ হত না। ১ নম্বর কম থাকার জন্য যারা পাশ করতে পারেননি তাদের নম্বর দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত ছিল। শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের বাড়তি ১ নম্বর করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের আরও দাবি যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পর্ষদের তরফে কোনও গাফিলতি হয়নি।
অন্যদিকে মামলাকারীদের তরফে বলা হয়, ২০১৮ সালেও যখন ৬টি প্রশ্ন ভুল থাকার কারণে মামলা করা হয়েছিল তখনও পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছিল যে প্রশ্নে কোনও ভুল নেই। তাহলে এক্ষেত্রে কেন বাড়তি ১ নম্বর দেওয়া হল?
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন