বৃষ্টি মাথায় নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে রাতভর অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকর। সকালের পর সরকারের সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত হয়েছেন তাঁরা। তবে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে একাধিক শর্ত। জুনিয়র চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থানেই বসে থাকবেন তাঁরা।
অন্যদিকে বুধবার বেলার দিকে চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল উপস্থিত হতেই, তাঁকে 'গো ব্যাক' স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। 'আগ্নিমিত্রা পাল গো ব্যাক' স্লোগান দেন তাঁরা।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে এক চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, "আমাদের আন্দোলনকে ভাঙতে এসেছিলেন। আন্দোলনে রাজনৈতিক রং লাগাতে এসেছিলেন। এই অবস্থান মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া দিচ্ছিলেন। এতে আমাদের আপত্তি আছে। তাই গো ব্যাক স্লোগান দিয়েছি। উনি অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে প্রতিক্রিয়া দিলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।"
তিনি আরও বলেন, "এর আগেও আমাদের অবস্থান মঞ্চে অনেকে এসেছেন। বিশেষ কয়েকজনও এসেছেন। তাঁদের নাম নিচ্ছি না। তাঁরা সকলে খুব সাধারণ পোশাকে এখানে এসে আমাদের পাশে বসে রাত কাটিয়েছেন। উনিও ওইভাবে এলে আমাদের কোনও আপত্তি থাকতো না। কিন্তু উনি আমাদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া দিচ্ছিলেন।"
অগ্নিমিত্রা পাল এই প্রসঙ্গে জানান, "আন্দোলনে রাজনৈতিক রং লাগাতে আসিনি। এই রাস্তাতেই বিজেপির পার্টি অফিস, সেখানে এসেছি। গো ব্যাক বললেও পাশে আসি।"
জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম ইমেলের মাধ্যেম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছিলেন। সেই ইমেলে জানানো হয়েছিল, নবান্নে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু সেই ইমেলের ভাষা 'অপমানজনক' মনে হয়েছে আন্দোলনকারীদের। তাই রাতে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনায় বসেননি তাঁরা। রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে দুপুর হতে চললেও এখনও জট কাটেনি, অবস্থানে রয়েছেন আন।
এবিষয়ে জুনিয়র ডাক্তার কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়েছে ১০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে দেখা করতে। কিন্তু আমাদের দাবি অন্তত ২৫ জন যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।“ তিনি আরও জানিয়েছেন, দাবি পূরণের জন্য সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের সাথে এই অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন বহু সাধারণ মানুষ। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে সেই মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। তারপরে সেখানেই তাঁরা অবস্থানে বসে পড়েন। রাতভর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অবস্থান চালাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের জন্য। স্থানীয়রা সেখানে রান্না করছেন। দক্ষিণ কলকাতার এক স্কুলের অভিভাবকরা সকালে আন্দোলনকারীদের জন্য বিভিন্ন খাবার নিয়ে আসেন। অন্য দিকে, জুনিয়র চিকিৎসকদের জন্য স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে, রাতভর জুনিয়র চিকিৎসকদের অবস্থান মঞ্চে এসেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘আশা করছি প্রশাসনের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আশা করছি আমরা বিচার পাব।” নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘প্রশাসন তোমাদের কোথায় দাঁড় করিয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী উৎসবে যোগ দিতে বলছেন, আমার কাছে এটাই উৎসব।”
অন্যদিকে, জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে এসেছেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও। পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তাঁরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন