Recruitment Scam: কলেজ সার্ভিস কমিশনেও দুর্নীতির অভিযোগ, CBI তদন্তের দাবি, উঠে এল প্রভাবশালীর নাম

রবিবার, কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কলেজ সার্ভিস কমিশনের 'দুর্নীতির খতিয়ান' তুলে ধরে এই দাবি জানিয়েছে চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে চাকরিপ্রার্থীদের সংগঠন
সাংবাদিক সম্মেলনে চাকরিপ্রার্থীদের সংগঠননিজস্ব চিত্র
Published on

স্কুলের পর এবার কলেজ শিক্ষক নিয়োগেও দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি উঠলো। রবিবার, কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কলেজ সার্ভিস কমিশনের 'দুর্নীতির খতিয়ান' তুলে ধরে এই দাবি জানিয়েছে চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনতে হবে। দুর্নীতিতে যুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তাঁকে পদত্যাগ করাতে হবে।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা তৎকালীন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির দ্বারস্থ হলেও তাদের কোনও অভিযোগ শোনা হয়নি। উল্টে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাদের বিকাশ ভবন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে দুর্নীতির একাধিক তথ্য পাঠালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

চাকরিপ্রার্থীদের সংগঠন ‘২০১৮ সিএসসি এমপ্যানেল্ড ক্যান্ডিডেটস অর্গানাইজেশন’ রবিবার যে 'দুর্নীতির খতিয়ান' প্রকাশ করেছে, তাতে উঠে এসেছে রাজ্যের শাসক দলের বেশ কয়েকজন নেতা মন্ত্রীর নাম। স্কুল সার্ভিসের মতো এখানেও উঠে এসেছে 'রঞ্জন'-এর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি 'ভূপেন'-এর নাম। খতিয়ানে দাবি করা হয়েছে, 'টাকা দিয়ে বা প্রভাব খাটিয়ে কলেজ সার্ভিস কমিশনে চাকরি পেয়েছেন এমন অসংখ্য ব্যক্তি আছেন। এদের সঙ্গে 'ভূপেন'-এর সম্পর্ক গভীর।'

'ভূপেন' কতজন'কে চাকরি দিয়েছেন? গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনে এরকম ৯ জন ব্যক্তির নাম, পরিচয়, কোন কলেজে চাকরি পেয়েছেন তা তুলে ধরা হয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের 'খতিয়ান'-এ। সংগঠনের দাবি, এই ব্যক্তিরা চাকরি পেয়েছেন আমডাঙ্গা যুগল কিশোর মহাবিদ্যালয় (এডুকেশন বিভাগ), ডোমকল গার্লস কলেজ (এডুকেশন বিভাগ), আসাননগর মদনমোহন তর্কালঙ্কার কলেজ (এডুকেশন বিভাগ), বেলদা কলেজ (সংস্কৃত বিভাগ), রামপুরহাট কলেজ (সংস্কৃত বিভাগ), বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয় (সংস্কৃত বিভাগ), রামানন্দ কলেজ (ভূগোল বিভাগ), সাগর মহাবিদ্যালয় (ভূগোল বিভাগ), পঞ্চকোট মহাবিদ্যালয় (ভূগোল বিভাগ)-এ।

এদিন চাকরিপ্রার্থীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় কৃষ্ণ পাল চাঞ্চল্যকর দাবি করে বলেন, 'কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে প্রথম প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডু চাকরি পাননি। অথচ তৃণমূলের বিধায়ক সমীর পোদ্দার নিজের জামাইকে তিনি যে কলেজের সেক্রেটারি ছিলেন সেখানে চাকরি করিয়ে দিয়েছেন। আর এক তৃণমূল নেতার ভাইপো অসংরক্ষিত ক্যাটাগরির হলেও তাকে সংরক্ষিত পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে।'

অন্য আরেক চাকরী প্রার্থী পলাশ মণ্ডল দাবি করেন, 'অঙ্ক ও সাঁওতালি বিষয়ে মেধাতালিকা বহির্ভূত প্রার্থীদের নিয়োগ করেছে কমিশন। নেতা-মন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয় ও কম যোগ্যতা সম্পন্নদের নিয়োগ করা হয়েছে।' উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, 'গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, কমিশনের প্রকাশিত মেধাতালিকায় নাম ছিল না 'বিশেষ প্রার্থী' নিজামুদ্দিন আহমেদ-এর। কিন্তু, তাঁকে গত ১৩ মার্চ ২০২০ সালে, পূর্ণমাত্রায় অতিমারী চলাকালীন কমিশন সুপারিশ করেছে ত্রিবেণী দেবী ভালোটিয়া কলেজে নিয়োগের জন্য; তাঁর আরও অভিযোগ এই নিয়োগের জন্য কোনও অতিরিক্ত বা সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি।'

‘২০১৮ সিএসসি এমপ্যানেল্ড ক্যান্ডিডেটস অর্গানাইজেশন’-এর কার্যকরী সভাপতি ক্ষুদিরাম চক্রবর্তী দাবি করেন, 'কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের ইন্টারভিউতে প্রায় পূর্ণ নম্বর দিয়ে তাদের নিয়োগপত্র হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত যারা চাকরি পেয়েছে তাদের নম্বর, কোন কলেজে চাকরি পেয়েছে, তাদের যোগ্যতা কমিশন প্রকাশ করেনি।'

এরপরেই ক্ষুদিরাম চক্রবর্তী বলেন, 'তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের এক নেতার স্ত্রী কম যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও ভূগোলে মেধা তালিকার ওপরের দিকে আছেন। এমনকি, তৃণমূল নেতা রমাপদ বেরার মেয়ে সুরমা বেরা 'কমিউনিকেটিভ ইংলিশ'-এ আশুতোষ কলেজে চাকরী পেয়েছেন, যে কলেজের অধ্যক্ষ স্বয়ং দীপক কর; যিনি আবার সিএসসি'র চেয়ারম্যান।'

কলেজ সার্ভিস কমিশনের 'দুর্নীতির খতিয়ান' প্রকাশ করার পাশাপাশি এদিন চাকরীপ্রার্থীরা দাবি জানান, ২০১৮ কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির যথাযথ বিচারবিভাগীয় ও সিবিআই (CBI) তদন্ত করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের শাস্তি এবং চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in