গত সপ্তাহে লালবাজার অভিযানে পুলিশ কমিশনারকে শিরদাঁড়া উপহার দিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবন অভিযানে স্বাস্থ্যকর্তাদের মস্তিষ্ক উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। সেই উদ্দেশ্যেই আজকের স্বাস্থ্যভবন অভিযানে মস্তিষ্ক হাতে নিয়ে হেঁটেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এই মুহূর্তে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার দুপুরে করুণাময়ী থেকে শুরু হয় জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল। মিছিলে প্রতীকী মস্তিষ্ক হাতে নিয়ে পথ হাঁটেন ডাক্তাররা। চিকিৎসকদের বক্তব্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একের পর এক দুর্নীতি হয়ে গেলেও স্বাস্থ্য ভবনের তরফে এত দিন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁদের আন্দোলনকে দমাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এক আন্দোলনকারীর কথায়, “এবার অন্তত মাথা খাটিয়ে কাজ করুক স্বাস্থ্যভবন।“
জুনিয়র ডাক্তারদের আরও দাবি, তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনে ‘সাফাই অভিযানে’ যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ভবনে ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার দাবিও তুলেছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উৎসবে ফিরুন’ মন্তব্য নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত উৎসবে সামিল হব না। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘অসংবেদনশীল’ বলে অভিহিত করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
পাঁচ দফা দাবি নিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা আজকের স্বাস্থ্যভবন অভিযানে নেমেছেন। প্রথমত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চমত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র ইস্তফা দাবি করেছেন তাঁরা।
সোমবার রাতে জুনিয়র ডাক্তাররা সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দেন। আজ বিকেল ৫টার মধ্যে এই সমস্ত দাবি পূরণে সরকার পদক্ষেপ করলে কর্মবিরতি তোলার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করবেন তাঁরা, না হলে কর্মবিরতি চলবে বলে ওই সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভবনের সামনে টানা অবস্থান শুরু করবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, সোমবার জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি নিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার মধ্যে কাজে ফিরতে হবে জুনিয়র চিকিৎসকদের। কাজে যোগ না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য কোনও পদক্ষেপ করলে তখন আদালত বাধা দিতে পারব না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন