আমরা ডাক্তার ভাইবোনদের জন্য দুঘণ্টা দশ মিনিট অপেক্ষা করেছিলাম। ২ ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পরেও ডাক্তাররা এলেন না। এর আগেও আমি দু'বার অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু তারা আসতে পারেননি। আমরা বলেছিলাম খোলা মনে আসুন। কোনও শর্ত বা দাবি নয়। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘর থেকে করা এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করার বিষয়ে অনড় থাকায় বৈঠক হয়নি। তিনি আরও বলেন, আপনাদের কাছে আবেদন আপনারা কাজে যোগদান করুন।
এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাবার পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা রেকর্ডিং করবার সিস্টেম করেছিলাম। স্বচ্ছতা বজায় রাখবার জন্য। আমরা তিনটে ভিডিও ক্যামেরা রেখে দিয়েছিলাম। এবং তারা যদি চাইতো আমরা সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে ওদের দিতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, সরাসরি সম্প্রচারে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু কেসটা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই আমরা ওটা করতে পারি না। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনেই ভেতরে ভিডিও শ্যুট করতে চেয়েছিলাম। আমরা ৪-৪৫-এর মধ্যে আসতে বলেছিলাম। যদিও তারা অনেকটা দেরি করে এসেছিলেন। আমরা তাতে কিছু মনে করিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি জানি তিলোত্তমার জন্য বাঙলার মানুষের একটা আবেগ আছে। প্রথম থেকেই একটা সহানুভূতি আছে বাঙলার মানুষের। আমরাও তাই চাই। কেসটা এখন আমাদের হাতে নেই। সিবিআই তদন্ত করছে। তাই আমি সিবিআই প্রসঙ্গেও কিছু বক্তব্যে যাবো না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের আলোচনা ছিল সেফটি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট নিয়ে। টেলিকাস্টের বিষয়ে আমরা ওপেন মাইন্ড। কিন্তু আমাদেরও কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা এমন কিছু করতে চাইনি যাতে অচলাবস্থা দূর না হয়। আমরা চিঠিতেও তা লিখে দিয়েছিলাম।
তিনি জানান, আমরা খোলা মনে আলোচনা চেয়েছিলাম। জুনিয়র ডাক্তাররা পরে বাইরে গিয়ে ব্রিফ করতে পারতেন। আমরা ভেবেছিলাম খোলা হাওয়ায়, খোলামেলা আলোচনায় আমার ছোট্ট ভাইবোনেরা ডাক্তারদের স্বার্থে মানবিক ভাবে এই আলোচনা আমাদের সাথে করবেন।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, তারা যে দু ঘণ্টা আসেননি তাতেও আমি তাদের বিরুদ্ধে কোনও অ্যাকশন নেবো না। আমরা বলেছিলাম ১৫ জন আসবেন। কিন্তু তারা ৩৪ জন এসেছিলেন। আমরা কাউকে আটকাইনি। কিন্তু তাঁরা সভাঘরে ঢুকলেন না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদেরও তো কাজকর্ম আছে। আমি টেলিফোন ধরিনি এই দু'ঘণ্টা। যদি কোনও এমারজেন্সি হত এই সময়। আমি আর চন্দ্রিমা ছাড়া কাউকে এখানে ডাকিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি তিনবার চেষ্টা করলাম। সুপ্রিম কোর্ট জুনিয়র ডাক্তারদের বিষয়ে তাদের মত জানিয়েছে। এই সময় ৭ লক্ষের ওপর মানুষ পরিষেবা পায়নি। ৩২ দিন হয়ে গেল। ২৭ জন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। মনে রাখবেন যে কোনও মৃত্যু মর্মান্তিক। যাদের হার্ট অপারেশান হবে তাঁরা অপেক্ষা করছেন। আর কতজন যে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে মারা গেছেন সেই তথ্য আমরা জোগাড় করার চেষ্টা করছি।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমাদের হাতে এসমাও আছে সবকিছু আছে কিন্তু আমি কিছু করবো না। আমি ২৬ দিন সিঙ্গুর নিয়ে অনশন করেছিলাম। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের একজন মন্ত্রীও আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেননি।
এদিন তিনি বলেন, আমাকে খুবই অপমান করা হল। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা করা হয়েছে। মানুষ চেয়েছিলেন তিলোত্তমার বিচার। কিন্তু আপনারা বুঝতে পারছেন ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়। আমি মানুষের স্বার্থে পদত্যাগ করতেও রাজি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন