আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে পথে নামছে বাম ছাত্র-যুব সংগঠন SFI ও DYFI। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী যৌন নির্যাতন করে খুন করা হয় ওই পড়ুয়াকে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বামেরা।
১০ ও ১১ আগস্ট অর্থাৎ শনিবার ও রবিবার এই দু’দিন বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে বাম ছাত্র-যুবদের। গতকাল এই বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করে SFI ও DYFI। শুক্রবার সকালে আর জি করের চার তলার সেমিনার হল থেকে দ্বিতীয় বর্ষের ট্রেনি চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। যা নিয়ে রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে আর জি কর চত্বর। ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল।
ইতিমধ্যে এই ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। লালবাজার সূত্রে খবর, ওই যুবক হাসপাতালের কেউ নন। তিনি বহিরাগত। চার তলার সেমিনার হল থেকে একটি ছেঁড়া ব্লু-টুথ হেডফোনের অংশ পেয়েছে পুলিশ। সেই হেডফোনের সূত্র ধরে ধৃতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল DYFI-র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, কলতান দাশগুপ্ত, রাজ্য SFI-র শীর্ষ নেতৃত্বরা হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, “নিরাপত্তা কোথায়? পুলিশ এখন আমাদেরকে আটকাতে এসেছে। এই পুলিশকে অন্য সময় দরকারে ফোন করলে পাওয়া যায় না। মৃতের পরিবারের সাথে আমাদেরকে কথা বলতে দিচ্ছে না পুলিশ। এমনকি পরিবারের সদস্যদের মিডিয়ার সাথেও কোনও কথা বলতে দিচ্ছে না। কেন এমনটা হবে?”
তিনি আরও বলেন, “যেখানে মৃত্যু হল সেখানেই কেন ময়নাতদন্ত হবে? রাজ্যের অন্য কোথাও ময়নাতদন্ত হতে পারতো। ১১ জন সদস্যের কমিটিতে কারা আছেন? কারা তাঁদের নাম সুপারিশ করলেন? কোন হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁরা সমস্ত তথ্য জানাতে হবে। সমস্ত উত্তর রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দিতে হবে”।
প্রসঙ্গত, গতকাল আর জি করের সেমিনার হল থেকে ওই ট্রেনি চিকিৎসকের দেহ অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার হয়। মর্মান্তিক ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই মৃতের পরিবারের তরফ থেকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু পুলিশ প্রথমে তা খারিজ করে এই ঘটনাকে আত্মহত্যার চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের জেরে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা যায়, মৃতের শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতের চিহ্ন মিলেছে। পেটে, আঙুলে, ঠোঁটে, যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। গলার হাড়ও ভেঙেছে। যৌন নির্যাতনের পর কোনও কিছু দিয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে ওই চিকিৎসককে, এটা কার্যত স্পষ্ট। কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের জন্য সিট গঠন করেছে পুলিশ।
মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডাক্তারি পড়ুয়ারা। দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন