দুর্নীতির ইতিহাসে ‘অনন্য নজির’ গড়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (WB SSC)। তৃণমূল সরকারের আমলে কার্যত নিজেদের সেই ‘কৃতিত্ব’ স্বীকারও করে নিয়েছে এসএসসি।
গত ১৩ মার্চ, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে গ্রুপ-সি-র ‘অবৈধ’ নিয়োগের যে তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি, তাতে দেখা যাচ্ছে ৩,৪৭৮ জনের মধ্যে ৩,০৩০ জনের নম্বর বাড়ানো হয়েছে দেদারে।
ওআরএম শিট বা পরীক্ষার উত্তরপত্রে কোন প্রার্থী ‘০’ পেলেও, এসএসসি-র সার্ভারে সেই নাম্বার হয়ে গিয়েছে ৫৮। আবার, কেউ খাতায় ১ নাম্বার পেলেও তাও হয়ে গিয়েছে ৫২ থেকে ৫৮।
কমিশনের প্রকাশিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ওআরএম শিট বা উত্তরপত্রে - ‘০’ পেয়েও কমিশনের সার্ভারে ৫৮ নাম্বার পেয়েছেন- ১৩ জন প্রার্থী।
‘০’ থেকে এসএসসি-র সার্ভারে ৫৫ থেকে ৫৭ পেয়েছেন- ৪৭ জন প্রার্থী।
‘০’ থেকে এসএসসি-র সার্ভারে ৫৫ পেয়েছেন- ১২ জন প্রার্থী।
‘০’ থেকে কমিশনের সার্ভারে ৫৪ পেয়েছেন- ৯১ জন প্রার্থী।
‘০’ পেয়েও এসএসসি-র সার্ভারে ৫৩ থেকে ৫১ পেয়েছেন- ৬ জন প্রার্থী।
অর্থাৎ, এসএসসি-র ওআরএম শিটে '০' পেলেও কমিশনের সার্ভারে ৫০-র উপরে নাম্বার পেয়েছেন ১৬৯ জন প্রার্থী।
শুধু তাই নয়-
উত্তরপত্রে ‘১’ পেয়ে কমিশনের সার্ভারে ৫৮ পেয়েছেন- ১৩ জন প্রার্থী। ৫৬-৫৭ নাম্বার পেয়েছেন ৫৮ জন, ৫২-৫৫ পেয়েছেন ৯৩ জন প্রার্থী।
ওআরএম শিটে ‘২’ নাম্বার হলেও কমিশনের সার্ভারে ৫৮ পেয়েছেন- ৬ জন প্রার্থী। ৫৬-৫৭ নাম্বার পেয়েছেন ৪৬ জন, ৫২-৫৫ পেয়েছেন ৯২ জন প্রার্থী।
উত্তরপত্রে ‘৩’ নাম্বার পেলে, কমিশনের সার্ভারে ৫৮ পেয়েছেন- ৯ জন প্রার্থী। ৫৬-৫৭ নাম্বার পেয়েছেন ৪৩ জন, ৫৪-৫৫ পেয়েছেন ৬৯ জন প্রার্থী।
ওআরএম শিটে ‘৪’ পেয়ে কমিশনের সার্ভারে ৫৮ পেয়েছেন- ৪ জন প্রার্থী। ৫৬-৫৭ নাম্বার পেয়েছেন ২২ জন, ৫২-৫৫ পেয়েছেন ৭৪ জন প্রার্থী।
পরীক্ষার খাতায় ‘৫’ পেয়েও কমিশনের সার্ভারে ৫৮ পেয়েছেন- ৬ জন প্রার্থী। ৫৬-৫৭ নাম্বার পেয়েছেন ২৩ জন, ৫২-৫৫ পেয়েছেন ৫৭ জন প্রার্থী।
প্রকাশিত ৩,৪৭৮ জনের পুরো তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কমিশনের সার্ভারে ৫০ থেকে ৫৮ নাম্বার বেশি পেয়েছেন- ৭৫৫ জন প্রার্থী। ৪০ থেকে ৪৯ নাম্বার বেশি পেয়েছেন ৬৬৪ জন, ৩০-৩৯ নাম্বার বেশি পেয়েছেন ৪১৬ জন প্রার্থী।
এছাড়া, কমিশনের সার্ভারে ২০-২৯ নাম্বার বেশি পেয়েছেন ১৭৬ জন, ১০ থেকে ১৯ নাম্বার বেশি পেয়েছেন ৪৫৮ জন এবং ১ থেকে ৯ নাম্বার বেশি পেয়েছেন ৫৬১ জন।
আবার, এই তালিকায় এমনও ৮৬ জন প্রার্থী আছেন, যাঁদের উত্তরপত্রে প্রাপ্ত নাম্বার থেকে সার্ভারে নাম্বার কমে গিয়েছে। সেই ফারাক ১ থেকে ১১ নাম্বার পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, গাজিয়াবাদে ওএমআর মূল্যায়নকারী সংস্থা ‘নায়সা’ থেকে পাওয়া তথ্য আর কলকাতার এসএসসি (SSC) অফিস থেকে পাওয়া নম্বরের তালিকার মধ্যে পার্থক্য থাকার অভিযোগ উঠে আসে সিবিআই তদন্তে। পরে, এই নাম্বার কারচুপির কথা আদালতে স্বীকার করে নেয় এসএসসি।
এরপর গত ১০ মার্চ, নম্বর কারচুপির তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ মেনে সোমবার তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি (SSC)। আর, তাতেই ফাঁস হয়েছে জালিয়াতির পর্দা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন