৩৮১ নয়, অবৈধ নিয়োগের সংখ্যা আরও বেশি। এই তথ্যই উঠে এলো SSC নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট থেকে। নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী সহ গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি মামলা মিলিয়ে অবৈধ নিয়োগের সংখ্যা প্রায় কয়েক গুণ বেশি বলে জানালো সিবিআই।
SSC নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটির যে রিপোর্ট আদালতে জমা পড়েছিল তাতে গ্রুপ সি পদে ৩৮১ জনের নিয়োগ সম্পূর্ণ বেআইনি বলে জানানো হয়েছিল। যাদের মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাতেই বসেনি। পরীক্ষা না দিয়ে শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে তারা নিয়োগপত্র পেয়েছিল।
সূত্রের খবর, একাধিক জেরা এবং নথিপত্র ঘেঁটে সিবিআই (CBI) নির্দিষ্টভাবে যে নাম এবং তথ্যপ্রমাণগুলি পেয়েছে, দুর্নীতির পরিমাণ তার থেকে অনেক বেশি। পরীক্ষা দেয়নি, খালি খাতা জমা দিয়েছে, অকৃতকার্য হয়েও চাকরি পেয়েছে এমন সংখ্যা কয়েক হাজার। সিবিআইয়ের তরফে সেই রিপোর্ট দ্রুত আদালতে পেশ করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।
সোমবার নিজাম প্যালেসে SSC নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদনকারীদের বেশ কিছুজনকে ডেকেছিল সিবিআই। যাদের মধ্যে ছিলেন নবম-দশম শ্রেণীর নিয়োগে দুর্নীতি মামলার আবেদনকারী অনিন্দিতা বেরা। এছাড়াও ছিলেন গ্রুপ সি নিয়োগে দুর্নীতি মামলার আবেদনকারী দীপঙ্কর রায় ও মিলন দাস। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী গ্রুপ সি নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম ব্যানার্জীও সোমবার উপস্থিত ছিলেন নিজাম প্যালেসে।
এ প্রসঙ্গে আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জী জানান, মূলত তদন্তের স্বার্থেই তাঁদের ডাকা হয়েছিল। তদন্তের জন্য সবরকম প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নথি তাঁরা সিবিআইকে জমা দিয়েছেন।
শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরিতে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আবেদন করেছিলেন ববিতা সরকার। সিবিআইয়ের তরফে ববিতা সরকারকেও সোমবার নিজাম প্যালেসে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। সিবিআইয়ের তরফে চলতি সপ্তাহেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রসঙ্গত, পরেশ অধিকারী তৃণমূলে যোগ দেওয়ার তিন দিনের মধ্যেই ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে SSC-র নতুন মেধা তালিকার শীর্ষে প্রকাশিত হয় তাঁর মেয়ের নাম। কম নম্বর পেয়ে, পার্সোনালিটি টেস্ট না দেওয়া স্বত্ত্বেও তাঁকে নিয়োগ করা হয়। শুধু তাই নয়, মাত্র তিন মাসের মধ্যেই বাড়ি থেকে হাঁটা পথে ইন্দিরা গার্লস হাই স্কুলে যোগ দেন অঙ্কিতা। মেধাতালিকায় অঙ্কিতার প্রাপ্ত নম্বরের থেকে ১৬ নম্বর বেশি ছিল ববিতা সরকারের। তারপরেও ববিতার নাম ওয়েটিং লিস্টে চলে যায়। প্রথম মেধাতালিকায় তাঁর নাম ছিল ২০ নম্বরে।
গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি নিয়োগে দুর্নীতির ক্ষেত্রে বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের কমিটির রিপোর্ট তদন্তে দ্রুত সহায়তা করেছে। কিন্তু নবম-দশম তথা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা মিলছে না। যার ফলে নতুন তথ্য পেতে সিবিআইয়ের তরফে কমিশনের বেশ কিছু আধিকারিক এবং সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন