রাজ্য শিক্ষক, শ্রমিক ও কর্মচারী সংগঠনের বিধানসভা ভবন অভিযানে ধুন্ধুমার কলকাতায়। মিছিল কিছুটা এগোতেই পুলিশি বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি বাধে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের। বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মীকে টেনেহিঁছড়ে প্রিজন ভ্যানেও তোলা হয়। এক আন্দোলনকারীর পেটে ও ঘাড়ে ঘুষি মারতেও দেখা যায় পুলিশকে। একজনকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
সরকারি কর্মচারীদের প্রায় ৩০টি সংগঠনের পক্ষ থেকে বকেয়া ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সমান মহার্ঘভাতার দাবিতে বিধানসভা ভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। লেনিন মূর্তির পাদদেশ থেকে অভিযান শুরু হয়। মিছিল প্রতিহত করার জন্য কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে প্রচুর ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করা হয়। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভাঙতেই পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের উপর। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এই ঘটনায়। অনেকে বিক্ষোভ দেখতে বিধানসভা ভবনের গেটের সামনেও চলে যান। তাঁদের প্রায় সকলকেই আটক করেছে পুলিশ।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন বলেন, 'আমরা এমন কী অন্যায় করেছি যে এইভাবে আমাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ? আমাদেরকে পুলিশ ধাক্কা মারছে। এই সরকার নির্মম।' স্টেট স্টিয়ারিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'শান্তিপূর্ণ মিছিল চলছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমাদের দাবি তাঁদের জন্যও যাঁরা সরকারি কর্মীদের ওপর অত্যাচার চালালেন। তাঁরা এতটা দলদাসে পরিণত হবে তা ভাবা যায় না। আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাব আমরা।'
কলকাতা পৌরসভার এক কর্মী বলেন, 'আমাদের দাবি হলো বকেয়া ৩৫ শতাংশ ডিএ, যা আমাদের ন্যায্য অধিকার, তা দিতে হবে। পাশাপাশি শূন্যপদে নিয়োগ এবং যারা রাজ্য সরকারের অসংগঠিত শ্রমিক তাদের স্থায়ীকরণের দাবিতে আমাদের এই অভিযান। হাইকোর্ট বার বার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে ডিএ মেটানোর। কিন্তু ডিএ না দিয়ে সরকার মামলা দীর্ঘায়িত করার জন্য সুপ্রিমকোর্টে মামলা করেছে। সুপ্রিমকোর্ট একাধিক ত্রুটি বের করায় মামলা এখন স্থগিত হয়ে রয়েছে। সরকারের ইচ্ছাই নেই আমাদের ডিএ দেওয়ার। তাই আমরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব শেখর মণ্ডল বলেন, 'গোটা ভারতবর্ষে যেখানে ৩৮ শতাংশ ডিএ দেওয়া হচ্ছে, আমাদের রাজ্যে কর্মচারী, শিক্ষকরা মাত্র ৩ শতাংশ ডিএ পাচ্ছে। এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে হকের লড়াই আমাদের। তাছাড়া শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, শিক্ষা ব্যবস্থাকে চুক্তিভিত্তিক করে গড়ে তোলার চেষ্টা এইসবের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। ডিএ দেবে দেবে করে দিচ্ছে না। বলা হচ্ছে রাজকোষ শূন্য। আমরা তো বুঝতে পারছি চারিদিকে দান খয়রাতি সবই চলছে, কেবলমাত্র সরকারি কর্মচারী আর শিক্ষকরা ডিএ পাচ্ছেন না। আগামী দিনেও আমাদের লড়াই জারি থাকবে।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন