রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠনের বিরোধিতা করে এই পরিকল্পনা বাতিল করার দাবি জানালেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠনকে 'সাদা হাতি পোষার ব্যবস্থা' বলে সমালোচনা করেন। এদিনই রাজ্য বিধানসভায় ধ্বনি ভোটে বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
এদিনের বিবৃতিতে মিশ্র বলেন - এই মহামারীর বিপদের সময় সরকার মানুষকে ওষুধ, অক্সিজেন, চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারছে না। হাসপাতালে শয্যা ও পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে পারছে না। শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত, মানুষের রুটিরুজির ব্যবস্থা করতে সরকার ব্যর্থ। তৃণমূল সরকার এই সব সমস্যার সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বদলে শাসকদলের কয়েকজনকে পিছনের দরজা দিয়ে পুনর্বাসন দিতে বিধান পরিষদ গঠনের নামে সাদা হাতি পোষার ব্যবস্থা করতে চাইছে, যার বিশাল খরচ জনগণের ঘাড়ে চাপবে।
সরকারপক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই প্রস্তাব পাস করিয়েছে জানিয়ে এদিনের বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন - মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় উচ্চকক্ষ অর্থাৎ বিধান পরিষদ গঠনের পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। রাজ্যবাসীর স্বার্থ এবং রাজ্যের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত।
বিধান পরিষদ গঠনের বিরোধিতা করে মিশ্র বলেন - ভারতের মত বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় স্তরে আইনসভার উচ্চকক্ষ বা রাজ্যসভা থাকার দরকার আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যস্তরে আইনসভার উচ্চকক্ষের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। বর্তমানে দেশে মাত্র ৬টি রাজ্যে বিধান পরিষদ বা উচ্চকক্ষ রয়েছে। প্রায় সব রাজ্যই বিধানসভায় প্রস্তাব নিয়ে বিধান পরিষদ তুলে দিয়েছে।
রাজ্যে বিধান পরিষদের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি জানান - পশ্চিমবঙ্গেও স্বাধীনতার পরে বিধান পরিষদ ছিল, কিন্তু তার কোনো কার্যকরী ভূমিকা ছিল না। ১৯৫২ থেকে পরবর্তী ১৭বছরে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ৪৩৬টি বিল পাস হয়েছিলো, তারমধ্যে মাত্র দুটি বিল সংশোধিত হয়েছিলো বিধান পরিষদে। ১৯৬৯ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব নিয়ে বিধান পরিষদ তুলে দেয়।
এর আগেও ২০১১ সালে বিধান পরিষদের বিরোধিতায় বামফ্রন্টের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি জানান - ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল সরকার গঠিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিধান পরিষদ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তখন বিধানসভায় বামফ্রন্টের যুক্তিপূর্ণ বিরোধিতার মুখে তিনি পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিলেন। এখন আবার অযৌক্তিকভাবে বিধান পরিষদ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব পেশ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাস করানো হল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন