দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত, রাত পেরিয়ে দুপুর, তবুও প্রতিবাদে অনড় ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীরা। সারারাত ধরে অবস্থান-বিক্ষোভ চলার পর এবার আমরণ অনশনের পথ বেছে নিলেন তাঁরা। বিক্ষোভস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশকিছু চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিস (এপিসি ভবন)-র সামনে ইতিমধ্যেই ১৪৪ ধারা লাগু করেছে পুলিশ। দফায় দফায় মাইকিং করে পুলিশ বিক্ষোভস্থল থেকে অবস্থান প্রত্যাহার করে নিতে বললেও তা মানতে নারাজ চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের একটাই দাবি, অযোগ্যদের সরিয়ে অবিলম্বে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দিতে হবে।
বিক্ষোভরত টেট উত্তীর্ণদের সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অর্ণব ঘোষ মঙ্গলবার সকালে পিপলস্ রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে জানান, "চাকরির নিয়োগপত্র না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলবে। পুলিশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান চলবে। এলাকায় বিরাট সংখ্যায় পুলিশ বাহিনি মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের তুলে দেবার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।"
বিক্ষোভরত চাকরিপ্রার্থী সন্টু দাস সাংবাদিকদের জানান, "আমাদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, আমরা টেট উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে গোপনে এসএমএস পাঠিয়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি আমাদের হকের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হক। নিয়োগপত্র না পাওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।"
সোমবার দুপুরে এপিসি ভবনের সামনে টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভের জেরে উত্তাল হয়ে ওঠে সল্টলেক চত্বর। এপিসি ভবনের সামনে শুয়ে পড়ে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান হাজার হাজার টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামে RAF। যার ফলে চাকরিপ্রার্থীদের সাথে কার্যত ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের।
ধুন্ধুমার পরিস্থিতি এবং দুপুরের অতিরিক্ত রোদের গরম সহ্য করতে না পেরে ঘটনাস্থলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু তাও থেমে থাকেনি বিক্ষোভ, আন্দোলন। পুলিশ এসে ধরপাকড় শুরু করে। বেশ কয়েকজনকে বলপূর্বক প্রিজনভ্যানে তোলে পুলিশ।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার, চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান বিক্ষোভকে সহমর্মিতা জানাতে বিক্ষোভস্থলে এসে উপস্থিত হন রাজ্যের প্রাক্তন বিএসএফ সেনা সুকান্ত ঘোশাল। তিনি বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা, বর্তমানে সল্টলেক করুণাময়ীতে থাকেন। দীর্ঘ দেড়মাস যাবৎ অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী থাকার পর খানিক সুস্থ হয়েই চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভস্থলে এসে অবিলম্বে তাঁদের চাকরি দেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি।
জানা গেছে, সল্টলেক চত্বরে ইতিমধ্যেই বহু পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘিরে ফেলা হয়েছে গোটা এপিসি ভবন। এই অবস্থায় চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান-বিক্ষোভ কোনদিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার বিষয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন