ফের কর্মবিরতির ঘোষণা রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকদের। সোমবার রাতে ৮ ঘন্টা জেনারেল বডির বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। নতুন ১০ দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দফায় কর্মবিরতি শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সরকার নিরাপত্তা না দিতে পারায় এই সিদ্ধান্ত বলে জানাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
সাগর দত্ত হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর হামলার পর গত শনিবারই জিবি বৈঠকের পর কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ছিল আর জি কর মামলার শুনানি। এরপর সোমবার গভীর রাত থেকে শেষ রাত পর্যন্ত বৈঠক করেন জুনিয়র চিকিৎসকদের মঞ্চ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’। ৮ ঘন্টা বৈঠকের পর অবশেষে ফের পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। নতুন করে মোট ১০ দফার দাবি পেশ করা হয়েছে। দাবি গুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এক নজরে ১০ দফা দাবি –
১। দ্রুত এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্যাতিতার বিচার।
২। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের অবিলম্বে অপসারণ।
৩। হাসপাতালগুলিতে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘রেফারেল’ (রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া) ব্যবস্থা।
৪। হাসপাতালে কত বেড ফাঁকা, তার ডিজিটাল মনিটরিং।
৫। কলেজভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন। সিসিটিভি, ডাক্তারদের জন্য অন কল রুম, শৌচালয়, হেল্পলাইন নম্বর, প্যানিক বোতাম চালু করতে হবে।
৬। নিরাপত্তায় সিভিক ভলেন্টিয়ারের বদলে পুলিশকর্মী নিয়োগ। সঙ্গে মহিলা পুলিশকর্মীও নিয়োগ করতে হবে।
৭। হাসপাতালগুলিকে দ্রুত শূন্যপদে নিয়োগ করতে হবে।
৮। ‘ভয়ের রাজনীতি’-তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠনকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
১০। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং রাজ্যের হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগগুলির প্রসঙ্গে দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে।
সোমবার দেশের শীর্ষ আদালতে আর জি কর মামলার শুনানিতে সরকারি হাসপাতালগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ কত দূর এগোল, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। এ নিয়ে রাজ্যের জবাব পাওয়ার পরে সরকারি হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো সংক্রান্ত কাজ শেষ করার সময়সীমাও বেঁধে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়ে দেয়, আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে হাসপাতালগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসানো-সহ সমস্ত কাজ শেষ করতে হবে।
উল্লেখ্য, টানা ৪২ দিন কর্মবিরতির পর গত ২১ সেপ্টেম্বর আংশিক কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে জরুরী বিভাগে কাজ শুরু করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্য সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের আশ্বাসের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। কিন্তু এরই মধ্যে গত সপ্তাহে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। এরপর থেকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে শুরু হয় কর্মবিরতি।
বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে কী হবে, সেটার জন্য সুপ্রিম কোর্টের শুনানির জন্য অপেক্ষা করছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। অবশেষে সোমবার শুনানি শেষে ফের জিবি বৈঠক করে। ১০ দফার দাবি নিয়ে ফের কর্মবিরতি শুরু করেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যসচিবের আশ্বাসের পর ১২ দিন পার হয়ে গেলেও কোনও ‘দৃশ্যমান পরিবর্তন’ তাঁরা দেখতে পাননি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন