মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলকাতা, বিধাননগর সহ একাধিক জায়গায় হকার উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। কোথাও ১২ ঘন্টার সময় দেওয়া হচ্ছে তো কোথাও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বহু বছর ধরে ফুটপাতে ব্যবসা করে আসা হকারদের দোকান। আচমকা এই অভিযানে রুটি রুজি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ছোটো ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়দের বক্তব্য অনুসারে, কেউ ১০ বছর, কেউ ২০ আবার কেউ বা ৩০ বছর ধরে গড়িয়াহাট, যদুবাবুর বাজার, সল্টলেক চত্বরের ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। কারোর মুদিখানার দোকান, কেউ খাবারের দোকান চালান আবার কেউ বা ফল বিক্রেতা। অনেকে পোশাক বিক্রেতা। আজ সকাল থেকেই হকার উচ্ছেদ নিয়ে অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ।
যদুবাবুর বাজারে একাধিক ফলের দোকানের ফল পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। যেসব মুদিখানা দোকানের জল, ঠান্ডা পানীয় ফুটপাতে ছিল সেই সমস্ত সামগ্রীও কলকাতা পুলিশকে নিজেদের প্রিজন ভ্যানে তুলতে দেখা যায়। গড়িয়াহাটে একাধিক বেআইনি দোকানের টিনের ছাউনি ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। এন্টালি থানা এলাকাতেও পুলিশের পক্ষ থেকে ফুটপাতে বসা হকারদের দোকান তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন হাতিবাগানেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে হকারদের সরে যেতে বলা হয়েছে।
সল্টলেক সেক্টর ৩ এবং সেক্টর ৫-এও এদিন উচ্ছেদ অভিযান চলে। বিধাননগর পুরসভা থেকে সেক্টর ৩-এর ফুটপাতে থাকা দোকানগুলি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের ফুটপাতে বহু বছর ধরেই তাঁরা ব্যবসা করতেন বলেই জানিয়েছেন হকাররা। এক হকার বলেন, 'পুরসভা থেকে প্রথমে এসে বলে ১২টার মধ্যে দোকান তুলে দিতে হবে। তারপরই সব ভেঙে দেওয়া হলো। কী কারণে ভাঙা হলো জানিনা। এখন কী করব কিছুই জানিনা'।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, ২০১১ সাল থেকে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এত বছর পর হঠাৎ ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ নিয়ে অতি তৎপর হওয়ার পিছনে কি তাহলে ২০২৪ নির্বাচনের ভোটের অঙ্ক? কারণ কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৭টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ১৩২টিতে এগিয়ে ছিল রাজ্যের শাসকদল। এমনকি রাজ্যের ১২১টি পুরসভার মধ্যে ৬৯টি পুরসভায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। গ্রামীণ ভোটের থেকে শহরাঞ্চলে খারাপ ফল হয়েছে তৃণমূলের। ফলে শহরাঞ্চলের মানুষদের মনজয় করতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে শাসকদল।
প্রসঙ্গত, সোমবারই নবান্নে পুরসভার চেয়ারম্যান, মেয়রদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বৈঠকেই বিধাননগর, কলকাতা সহ একাধিক পুরসভার অধীনে থাকা ফুটপাত দখল নিয়ে সরব হন তিনি। ওই প্রশাসনিক বৈঠকেই দলের নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ফুটপাতে হকার বসানোর অভিযোগ তোলেন তিনি। গতকাল তিনি বলেন, এমন অনেক পুলিশ রয়েছে যারা ঠিক করে কাজ করছে না। তবে কি মুখ্যমন্ত্রীর 'ধমক'-এর পরেই পুলিশের এই তৎপরতা? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে সব মহলে।
প্রসঙ্গত, বাম আমলের শেষ দিকে পুরসভায় আইন তৈরি করে বলা হয়, ট্রাফিক সিগনালের ৫০ মিটারের মধ্যে কোনও হকার বসতে পারবে না। যদিও তৃণমূল পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পর সেই নিয়ম আর কার্যকরী করা হয়নি। এবার সেই নিয়মকেই কার্যকরী করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন