আগামী ২১ জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবস। আর সেই দিনকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মত এবারও কলকাতায় শাসক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তবে এবার ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচী উপলক্ষ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সূত্র মারফত জানা গেছে, গত ৭ জুলাই রাজ্য পুলিশের এডিজি এবং ট্রাফিক অ্যান্ড রোড সেফটির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজি রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এরপরেই স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক এবং প্রধান গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নিকটবর্তী সমস্ত সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেন মেডিক্যাল টিম মোতায়েন রাখা হয়। এছাড়াও, ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত মজুত রাখার কথা বলা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, শহীদ দিবসের সমাবেশে অনেক বেশি জনসমাগম হবে। সেই জন্য মেডিকেল টিম এবং ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির জন্য যেন প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করা হয়। এই সমস্ত ব্যবস্থাপনা ও পরিষেবা আগামী ১৯ জুলাই থেকে অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত বহাল রাখতে হবে। যদিও এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ।
তবে অন্য এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, "বহু জেলা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন আসেন। রাস্তায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আগাম ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছিল। সেই মতোই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।"
রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, কোনও দলীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে বলা এবং নির্দেশিকা জারি করার ঘটনা নজিরবিহীন। এই প্রথম ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি নির্দেশিকা জারি করা হল। যেখানে ২১ জুলাইকে 'শহিদ দিবস' বলে স্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশ নিয়ে শাসক দলের এই সরকারি নির্দেশিকা জারি করার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই তীব্র কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। কারণ, এর আগে কোনও রাজনৈতিক দলের 'শহিদ দিবস' উল্লেখ করে প্রশাসনের তরফে চিঠি বা নির্দেশিকা দিতে দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, "তৃণমূল আর নবান্ন একই ব্যাপার, এ তো জানা কথা! কিন্তু এমন ব্যবস্থা এ বারই প্রথম রাখতে হচ্ছে কেন? সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, জেলায় জেলায় শাসক দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথেও সেই বিরোধের ছাপ পড়তে পারে ধরে নিয়েই কি আগাম ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ?"
তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলছেন, "প্রতি বার ২১শে-র সমাবেশ আগের বারের সমাবেশকে ছাপিয়ে যায়। বিধানসভা ভোটে জয়ের পরে এ বার প্রথম ২১ জুলাই, তার উপরে গত দু’বছর সমাবেশ হয়নি। তাই অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ভিড় হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সেই অনুযায়ীই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে। আমরা সকলেই চাই, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন