কলকাতার এক নামজাদা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা কর মকুব হয়েছে। কর মকুবের জন্য আবেদন করেছিলেন রাজ্যের পুর ও নগোরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিজেই! যা নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাচক্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ই গত মাসে মুখ্যমন্ত্রীকে ডি.লিট দিয়েছে। এই দুই ঘটনার মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে।
২০১৪ সালে কলকাতার একটি নামি বেসরকারি কলেজ নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া ৩-এ নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু করে। নিউটাউনে জমির দাম বা সম্পত্তির পরিমাণ হিসেবে করের মূল্য আকাশছোঁয়া। গণশক্তি প্রত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের 'প্ল্যান স্যাংশন ফি' মকুব করা হয়েছিল রাজ্যপালের একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। সেই সময় ৫৯ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৫৫ টাকা কর মকুব করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ 'রি-স্যাংশন ফি' ১ কোটি ৪৮ লক্ষ ২০৬ টাকা মকুব করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে ২ কোটি ৭ লক্ষ ৬ হাজার ৮ টাকা কর মকুব করা হয়েছিল। মোট ৪ কোটি ৪১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯৬৯ টাকার কর ছাড় পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
তৃতীয় পর্যায়ের কর মকুব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বেশি। কারণ ২০১৯ সালে রাজ্যপাল পরিবর্তন হওয়ার পর নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (NKDA)-র কাছে কর মকুবের জন্য চিঠি পাঠায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এনকেডিএ তাতে সম্মতি দেয়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেন ফিরহাদ হাকিমের সাথে। ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল রাজ্যের মন্ত্রীকে চিঠিও পাঠায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
২৬ এপ্রিল ফিরহাদ হাকিমের ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশাল ডেপুটেশন এনকেডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে কর মকুবের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। দীর্ঘ সময় পর ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাজ্যের অতিরিক্ত সচিবের দপ্তর মারফত এনকেডিএ-কে কর মকুবের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। সেই কর মকুব করা হয়েছিল।
২০০৭ সালের এনকেডিএ আইনের ৬৫(৩) ধারার সাহায্যে এনকেডিএ'র বাইরের লোক হয়েও রাজ্যপাল বা অতিরিক্ত সচিব কর মকুবের সুপারিশ করেছেন।
সূত্রের খবর, ব্লিডিং প্ল্যানের কর মকুবের পাশাপাশি সম্পত্তি করও মকুবের জন্য আবেদন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। সম্পত্তি করের পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা। অতিরিক্ত সচিব এই কর ৫০ শতাংশ ছাড়ের জন্য নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথোরিটিকে চিঠি দিয়ে সুপারিশ করেছেন ১৫ মার্চ। তার আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১০০ শতাংশ কর ছাড়ের সুপারিশ করেছিলেন। আর মমতা ব্যানার্জিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি ডি.লিট দিয়েছিল ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন