কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গণসংগ্রাম গড়ার ডাক দিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলের মাঝেমধ্যেই অবস্থান বদল ঘিরেও প্রশ্ন তুললেন সিপিআইএম সাধারন সম্পাদক। এই সময়ে দেশকে বাঁচাতে সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির একজোট হয়ে বিজেপির বিরোধিতা করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
কলকাতায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক উপলক্ষে সোমবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশের আয়োজন করেছিল কলকাতা জেলা সিপিআইএম। ইয়েচুরি বলেন, ”গান্ধী হত্যাকারীদের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে দেশ শাসন করছেন নরেন্দ্র মোদী। হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনই তাদের লক্ষ্য। এই সময়ে দেশকে বাঁচাতে সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির একজোট হয়ে বিরোধিতা করা দরকার। বিজেপি’কে হঠাতে পারলে তবে ভারত বাঁচবে, তারপরে উন্নত ভারত গঠনের জন্য পথ অগ্রসর হওয়া যাবে।“
ইয়েচুরির কথায়, বিজেপি সরকারের আমলে দেশে ব্যাপক কর্পোরেট লুট হয়েছে। যার ফলে দেশবাসীর দুর্দশা বেড়েছে। সংবিধানের ওপরে আক্রমণ বেড়েছে বিজেপির আমলে। তাই এই মুহূর্তে বিজেপি সরকারকে হঠানোই মুখ্য কর্তব্য। ইয়েচুরি বলেন, “দুর্নীতি আগেও হয়েছে, কিন্তু এমন লুট অতীতে কখনো হয়নি। সাধারণ মানুষের সঞ্চয় লুটে আদানি দ্রুতগতিতে ধনী হচ্ছেন। এটা সরকারি মদত ছাড়া সম্ভব নয়। সম্প্রতি আদানির শেয়ার কমার যে ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমা এবং ব্যাঙ্কে দেশবাসীর যে সঞ্চয় রয়েছে, তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সরকারের দায়িত্ব আদানিকে বাঁচানো নয়, জনগণের সঞ্চয়কে রক্ষা করা। তার জন্য আদানির বন্দর, বিমানবন্দর, সিমেন্ট কারখানা কয়লাখনি বাজেয়াপ্ত করুক সরকার।“
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইকে জোরদার করতে হবে। গণ-বিক্ষোভ তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গেই সংবিধানকে ধ্বংস করা, ঘৃণা ছড়ানোর রাজনীতির বিরুদ্ধে গণসংগ্রাম জরুরি। এই কাজ করতে পারেন বামপন্থীরাই।’’
জনস্বার্থে রাজনীতির বদলে মোদী সরকার ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতি করছে এবং প্রতিবাদের কন্ঠরোধ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইয়েচুরি। তিনি বলেন, “গান্ধীর বিপরীত পথে হেঁটে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিজেপি ঘৃণার রাজনীতি করছে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত সংখ্যালঘুদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বলছেন। কিন্তু আসল যুদ্ধ চলছে ধনী গরিবে, উঁচু এবং নিচু জাতে, মনুষ্যত্ব নিয়ে। আরএসএস কমিউনিস্টদের শেষ করার কথা বলছে। আমরা হিটলারের পরিণতি দেখিয়ে বলছি, লালঝাণ্ডাকে শেষ করা যায় না, তারা মরেও মরে না, তাদের লড়াই চলতেই থাকে।“
কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবস্থান বদল করে নেয় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল, এমনটাই মনে করছেন সিপিআইএম সাধারন সম্পাদক। সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনার দৃষ্টান্ত টেনে ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘তৃণমূল এক সময়ে এনডিএ সরকারের শরিক ছিল। এখনও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তারা অবস্থান বদলে ফেলে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তৃণমূল সব বিরোধীদের একজোট হয়ে ভোটদানের কথা বলেছিল। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় তাদের ভূমিকা উলটে গেল কেন? মোদী সরকারের বিরোধিতায় সংসদে তৃণমূল চুপ করে গেছে কেন? ত্রিপুরাতে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’কে হঠাতে বামফ্রন্ট বিজেপি-বিরোধী সবাইকে একজোট করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করে এখন বাংলা থেকে ত্রিপুরাতে গিয়ে তৃণমূল সেই নির্বাচনে লড়তে চাইছে কেন? বিজেপিকে বাঁচানোর জন্য? বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের এই সম্পর্কের রহস্যটা কী?”
কলকাতায় সিপিআই(এম)’র দুদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষ হওয়ার পরে এদিন ধর্মতলায় রানি রাসমণি রোডে বিরাট জনসমাবেশ হয়েছিল। শহরের ৯টি জায়গা থেকে মিছিল করে সভাস্থলে আসেন সিপিআইএমের কর্মী-সমর্থকেরা। সিপিআইএম প্রতিষ্ঠার সময়ের ৯ জন পলিটব্যুরো সদস্যের (যাঁদের ‘নবরত্ন’ বলা হয়) নামে এক একটি ‘ব্রিগেড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল মিছিলগুলিকে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি, রাজ্য সম্পাদক সেলিম, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা সকলেই বিভিন্ন মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন। ইয়েচুরি ছিলেন ‘জ্যোতি বসু ব্রিগেডে’, যা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে শুরু হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্যও এ দিন শামিল হয়েছিলেন শহরের রাজপথে নানা মিছিলে। সমাবেশে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন