নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শাসক দল তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী জেলে রয়েছেন। যার জেরে যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে ঘাসফুল শিবির। এমতাবস্থায় শুক্রবার তৃণমূলের স্বীকৃতি বাতিলের হুঁশিয়ারি দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। যার জেরে নাম না করেই বিচারপতিকে নজিরবিহীন আক্রমণ করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
কুণালের কথায়, "যেখানে ভুল রয়েছে, তা নিয়ে একশো বার বলবেন। সরকারের ভুল থাকলে বলবেন, প্রভাবশালীর ভুল থাকলেও বলবেন। কিন্তু তাঁর জন্য একটা দল তুলে দিতে বলব, ওমুককে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করব, এটা কী? আমিও কারোর নাম করে কিছু বলছি না। আমি ধরে নিচ্ছি 'AG' অর্থাৎ 'অরণ্যদেব গাঙ্গুলী'।"
তৃণমূল নেতা বলেন, "কেউ হয়ত নিজেকে 'অরণ্যদেব' ভাবছেন। কিন্তু বিচারকের চেয়ারের সুরক্ষা নিয়ে কেউ যদি বলে আমার দলকে তুলে দেবে, একজন মুখপাত্র হিসেবে তাঁকে কি আমি রসগোল্লা খাওয়াব নাকি? যান অরণ্যদেব গাঙ্গুলী, আপনার যা ক্ষমতা আছে করে নিন। জুনিয়ার হিসেবে কোন সিনিয়রের পিছনে ঘুরতেন, সেই রাজনৈতিক উইশ লিস্ট বিচারকের আসনে বসে বলা যায় না।"
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম না করেই কুণাল বলেন, "যিনি নিজেকে অরণ্যদেব ভাবছেন তাঁকে বলছি, সরকার তার মত করে চেষ্টা করছে ভুল শোধরানোর। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ (Instruction) দিয়েছেন, আর আপনি হিরো সেজে ওখানে বলবেন দালাল মুখপাত্র! বিচারকের আসনের অপব্যবহার করছেন। নিজের ইমেজ বিল্ডিং করছেন। অবসরের পর রাজনীতি করার জমি তৈরী করছেন। পশ্চিমবঙ্গের বদনাম করতে চাইছেন।"
প্রসঙ্গত, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে অবৈধদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত কার মস্তিষ্কপ্রসূত, তা জানতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি শিক্ষাসচিব মণীশ জৈনকেও আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন তিনি। সেই নির্দেশ মেনেই শুক্রবার বিচারপতির এজলাসে হাজির হন মণীশ। কিন্তু একইসাথে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানির আগেই হাইকোর্টের শুনানি শুরু হয়। শিক্ষাসচিবকে বিচারপতি বলেন, "আমি মুখ্যমন্ত্রীর যন্ত্রণা বুঝতে পারি। কিন্তু কিছু দালাল, যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত, তাঁরা আদালতের নামে যা ইচ্ছে বলছে। বলছে নিয়োগ হলেই আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছে। আদালত এগরোল নাকি, যে এলেই স্থগিতাদেশ পেয়ে যাবে?" বিচারপতির এই মন্তব্য ঘিরেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুণাল ঘোষ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন