এবার কলকাতা পুরনিগম কর্তৃপক্ষ বাধ্য হচ্ছে কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিতে। এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরকর্মী ও আধিকারিকদের ‘ওভারটাইম-ইনসেনটিভ’ বন্ধ করে দেওয়া। অবসরের পরেও যে সমস্ত অফিসার বা কর্মীরা ‘অপরিহার্যতার' অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে মোটা টাকা বেতন নিচ্ছেন তাঁদের অধিকাংশকেই ‘বিদায়’ দেওয়া।
স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যের সর্ববৃহৎ পুরসংস্থায়। আর সেটাও পুরনির্বাচনের প্রাক্কালে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি রাজ্যের সব দফতর ও সরকারি সংস্থাকে খরচ কমাবার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা লকডাউন ও কোভিডের জেরে রাজ্য সরকারেরও আয় কমেছে অনেকটাই। কলকাতা পুরনিগম এই নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য নয়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো রাস্তা ধরেই পুরনিগমেও খরচের রাশ টেনেছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কেননা তিনিই কলকাতা পুরনিগমের প্রধান প্রশাসক।
শুধু তাই নয়, পুরনিগমের খরচ কোথায় কীভাবে কতটা কমানো যায় তা খতিয়ে দেখতে সোমবারই পুর কমিশনারকে ‘প্রাইস ওয়াটার’ ধাঁচের আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা সংস্থাকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। ওই সংস্থা পুরসভার সমস্ত বিভাগের অফিসার ও কর্মীদের হিউম্যান রিসোর্স অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি সংগ্রহ করবে। পরবর্তী আর্থিক বছর শুরুর আগেই কোন বিভাগে কত অতিরিক্ত অফিসার ও কর্মী আছেন তা চিহ্নিত করবে সংস্থাটি।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতার রিপোর্ট হাতে পেলে একদিকে যেমন খরচ অনেক কমানো যাবে, অন্যদিকে তেমনই নতুন কর্মী নিয়োগের দরজা খুলবে। চাকরি পাবে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন বহু নতুন ছেলেমেয়ে।
বর্তমানে কলকাতা পুরনিগমে স্থায়ীকর্মী হিসাবে কাজ করছেন প্রায় ২০ হাজার কর্মী ও আধিকারিক। চুক্তিভিত্তিক কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। এই দুটি ক্ষেত্রেই কিন্তু আগামী দিনে বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। মাত্র তিনদিন আগেই ১৬১ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করার পাশাপাশি বেশ কয়েক মাস ধরে পুরনিগম যে ঠিকাদারদের পাওনা মেটাতে পারছে না সেই বিষয়টিও সামনে এসেছে।
কিন্তু লকডাউনকালে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ অফিসার ও কর্মী নিয়ে পুরপরিষেবা দিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নানা বিভাগে অতিরিক্ত অফিসার ও কর্মী রয়েছেন। আবার অনেক দফতর চাহিদার তুলনায় মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করছে। এবার সেই জায়গাতেই ধাক্কা আসতে চলেছে। অপ্রয়োজনীয় পদ বা কর্মী আর রাখা হবে না। প্রয়োজনে অন্য দফতরে কর্মীদের বদলি করা হবে।
একই সঙ্গে সামনে এসেছে যে দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা পুরনিগমের নানা বিভাগ ও দফতরে ‘ওভারটাইম-ইনসেনটিভ’ চালু রয়েছে। পুরঅফিসার ও কর্মীদের যোগসাজশে এই ওভারটাইম ও ইন্সেটিভ খাতে প্রতিমাসে পুরনিগমের কোষাগার থেকে কয়েক কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অবসর নেওয়ার পরেও বহু অফিসার প্রভাব খাটিয়ে মোটা টাকা বেতনের চুক্তিতে উচ্চপদে থেকে গিয়েছেন। এবার এই সব ক্ষেত্রেই কোপ পড়তে চলেছে আর সেটাা এমন একটা সময় যখন পুরনির্বাচনের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন