বুধবার তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে সরানো হয় কুণাল ঘোষকে। এরপর এদিনই এক সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রাজ্যের চলমান নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেন তিনি। তিনি দাবি করেন, “পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নামে টাকা তোলা হচ্ছে, তা দল আগে থেকেই জানত।“
বুধবার এক সংবাদ মাধ্যমে অপসারিত রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেন, “রাজ্যে চাকরি বিক্রি হচ্ছে, নিয়োগে দুর্নীতি হচ্ছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম করে টাকা তোলা হচ্ছে, সে খবর দলের কাছে আগে থেকেই ছিল। এমনকী ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগেও চাকরি বিক্রির কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানত। সেকারণেই ২০২১ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়নি। যা নিয়ে পার্থ ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন।“
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছেন তিনি। তৃণমূলের আরও দুই বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং জীবন কৃষ্ণ সাহাকেও সিবিআই গ্রেফতার করেছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়।
তবে কুণাল এদিন এও দাবি করেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত নিয়োগে এত বড় দুর্নীতি নিয়ে দল অবগত ছিল না।
এরপরেই বিস্ফোরক দাবি করেন কুণাল। তিনি জানান, “চাকরি বিক্রি করে কেউ না কেউ অন্যায় করেছে। সেই লোক এখনও মন্ত্রিসভায় আছেন। দলের মধ্যে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। যিনি চাকরি বিক্রিতে যুক্ত তিনি এখনও রাজ্যের মন্ত্রী।”
প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে কলকাতা হাইকোর্ট। যার ফলে চাকরিহারা হয়েছে ২৫,৭৫৩ জন চাকরিপ্রার্থী। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য ও এসএসসি। আপাতত মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।
কুণাল এদিন আরও দাবি করেন, বর্তমানে রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির যা পরিস্থিত, সেটা থাকত না, যদি এসএসসির স্বদিচ্ছা থাকত। কুণাল বলেন, “আমি বিকাশ ভট্টাচার্যের সমালোচনা করছি, বিজেপিরও করছি। কিন্তু ওরা তো নিজেদের রাজনীতি করছে। যেমন আমি করছি। কিন্তু সেই রাজনীতি আমরা হতে দিচ্ছি কেন? এই পরিস্থিতি হতে দিচ্ছি কেন?”
দলের রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর কি দলবদলের কথা ভাবছেন তিনি? এর উত্তরে কুণাল জানান, ”আমি তৃণমূলের সৈনিক। মমতা দিদি আমার নেত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেতা বলে মানি, ওকে ভালোবাসি। আমি দলের সৈনিক হিসাবে থেকে যাব। দল শেষ সুতোটা ছেড়ে দিলেও থেকে যাব।”
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে উত্তর কলকাতার এক ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত রক্তদান শিবিরে কুণাল ঘোষ এবং তাপস রায় দুজনেই অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া তাপস রায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন কুণাল। আর তার কয়েক ঘন্টার মধ্যে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে কুণালকে অপসারিত করে দল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন