শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরএসএসের বলপূর্বক 'অনুপ্রবেশের' চেষ্টা। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (IIEST) বহু কর্মীকে কলকাতার শহীদ মিনার ময়দানে হওয়া মোহন ভাগবতের অনুষ্ঠানে জোর করে আনার অভিযোগ উঠলো রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসের বিরুদ্ধে। সোমবার শহীদ মিনার ময়দানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম জয়ন্তী পালন করে আরএসএস।
হাওড়ার শিবপুরের IIEST, যা সাধারণত BE কলেজ হিসেবে পরিচিত, একটি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, আরএসএসের শ্রমিক সংগঠন, ভারতীয় মজদুর সংঘ অনুমোদিত কর্মচারী ইউনিয়ন - আইআইইএসটি শিবপুর এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন - কর্মীদের জোর করে সভায় এনেছে। শুধু তাই নয়, 'গণবেশ' অর্থাৎ আরএসএসের বিশেষ পোশাক - সাদা জামা, টুপি ও জুতো পরে আসতে বাধ্য করা হয়েছে তাঁদের। এই সমস্ত কিছু কিনতে কর্মীদের থেকেই ৫৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, কদিন ধরে মোহন ভাগবতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তাদের উপর চাপ তৈরি করছিল ইউনিয়ন। চুক্তিভিত্তিক ও অস্থায়ী কর্মীদের উপর চাপ ছিল বেশি। সূত্রের খবর, অনেক কর্মচারী আদর্শগত কারণে আরএসএস প্রধানের সভায় যোগ দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। নানাভাবে চাপ তৈরি করে তাঁদের সভায় যেতে বাধ্য করা হয়। সোমবার ভোর সাড়ে ৬টায় প্রায় ২০০ কর্মীকে গণবেশ পরিয়ে শিবপুরের ক্যাম্পাসে প্যারেড করানো হয় এবং তারপর বাসে করে শহীদ মিনার ময়দানে আনা হয় তাদের, যেখানে মূল বক্তা ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত।
এক চুক্তিভিত্তিক কর্মীর কথায়, "আমি মনে প্রাণে আরএসএস বিরোধী কিন্তু চাকরি বাঁচাতে আমাকে আরএসএসের পোশাক পরতে হয়েছে এবং তাদের অনুষ্ঠানেও যেতে হয়েছে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানিয়েছেন, "আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে যদি আমরা সভায় যোগ না দিই, তাহলে আমাদের চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে।"
আর একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মীর কথায়, "আমাদের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়েছে ইউনিয়ন। এই প্রথম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম কাজ হয়েছে। জোর করে আমাদের একটি আদর্শের পোশাক পরিয়ে সেই আদর্শের প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা অন্যায়।"
আর একজন বলেন, "আমি কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চাই না। চাকরি বাঁচানোর জন্য অনুষ্ঠানে যেতে হয়েছে, প্যারেড করতে হয়েছে। ক্যাম্পাসে স্বাধীনতা বলে কিছু নেই।"
এই অভিযোগ নিয়ে আইআইইএসটি কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে কিছু বলতে চায়নি। IIEST মুখপাত্র নির্মাল্য কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছেন তিনি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তবে যাদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, আইআইইএসটি শিবপুর এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, তারা এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় গড়াই বলেন, "এই সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে। ভাগবতের সভায় যাওয়ার জন্য আমরা কাউকে জোর করিনি। কিছুদিন আগে শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-এর প্রকাশ্য সভায় আমরা ঠিক করি শহিদ মিমারের সভায় আমরা যাব। যারা আমাদের সঙ্গে যেতে চান, যেতে পারেন। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় ২০০ জন কর্মচারী এদিন সংঘ প্রধানের সভায় গিয়েছিলেন।"
পোশাক কিনতে জোর করে টাকা নেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, "পোশাক কিনতে জোর করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিডিয়ার কাছ থেকেই শুনছি। পোশাক কেনার সময় কেউ আপত্তি করেননি। কর্তৃপক্ষের কাছে কেউ নালিশও করেননি এই নিয়ে।"
জানা গেছে, যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কর্মী এদিন শহীদ মিনারের সভায় গিয়েছিলেন, তাই ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকা নেতাজি মূর্তিতে সন্ধ্যেবেলা মালা দেওয়া হয়।
ঐতিহ্যমন্ডিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নেটিজেনরা। সরব হয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রক্তনীরাও। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "কত বড় অমানবিক হলে চাকরি করে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে মানুষকে কিভাবে ব্যবহার করতে পারে! আসলে আরএসএস-বিজেপির মধ্যে গণতন্ত্রই নেই। মানুষের কণ্ঠরোধ করতে জানে কেবল ওরা।"
বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা বলেন, আরআরএসের এত দুর্দিন আসেনি যে জোর করে লোক নিয়ে যেতে হবে।
এর আগেও IIEST-তে জোর করে সংঘের বিরুদ্ধে জোর করে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে বেদ, পুরাণ নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিযোগিতার মঞ্চে ভারতমাতার ছবির পাশাপাশি আরএসএস-এর প্রাক্তন প্রধান মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকরের ছবি সম্বলিত বই 'চিন্তাচয়ন' রাখা ছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন