স্থায়ী কর্মীর স্বীকৃতি, ন্যূনতম মজুরি সহ ষোলো দফা দাবিতে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখাল পশ্চিমবঙ্গ আশা স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়ন। সিটু অনুমোদিত এই সংগঠনটি রাজ্যের স্বাস্থ্যভবনে NRHM-এর অধিকর্তার কাছে শুক্রবার একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। এই স্মারকলিপি জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় বিধাননগরে। পুলিশের সাথে বচসায় জড়িয়ে পড়েন আশা কর্মীরা।
স্মারকলিপি জমা দেওয়ার আগে করুনাময়ী মোড় থেকে একটি মিছিল শুরু করেন কয়েকশ আশা কর্মী। কিন্তু মিছিল শুরু হওয়ার সাথে সাথেই তা আটকে দেয় পুলিশ। বেশ কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্ক চলার পর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদিকা সাবিনা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল অধিকর্তার সাথে দেখা করেন। সংগঠনের অভিযোগ, অধিকর্তা প্রথম থেকেই স্মারকলিপি নিতে রাজি থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা সৃষ্টি করা হয়।
তাঁদের আরও অভিযোগ, শুক্রবারের এই কর্মসূচিতে যাতে যোগ দিতে না পারেন তার জন্য বহু আশা কর্মীকে ট্রেনিং বা ভ্যাকসিনের মতো ডিউটি দেওয়া হয়ছে। বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আন্দোলনকারী আশা কর্মীদের অভিযোগ, তাঁরা প্রাপ্য সাম্মানিক পাচ্ছেন না। ৪৬ তম শ্রম কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করে ন্যূনতম ২১ হাজার টাকা বেতন এবং ১০ হাজার টাকা মাসিক পেনশনের দাবি জানিয়েছেন তাঁর। কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার আশা কর্মীদের জন্য ১০০০ টাকা 'ঝুঁকি ভাতা' বরাদ্দ করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আশা কর্মীরা এই পুরো টাকা পাননি বলে অভিযোগ। প্রতি মাসের ১ তারিখে এই ভাতা প্রদানের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, "বেশ কয়েকটি দাবি অবিলম্বে সমাধান হবে বলে অধিকর্তা জানিয়েছেন। ভাতার টাকা স্বাস্থ্য ভবন থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও কেন আশা কর্মীরা টাকা পাননি তা তাঁরা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।"
"আমাদের অন্যতম দাবি ছিল ইনসেনটিভ এর টাকা ভেঙে ভেঙে দেওয়া যাবে না। অধিকর্তা জানিয়েছেন এই বিষয়ে ওনারা তৎপর। একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা ডিসবার্স করা হয়।ব্যাংকটির সাথে তাঁরা কথা বলেছেন, চেষ্টা করছেন সামনের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস থেকে একসাথে টাকা দেওয়ার। এখন পরীক্ষামূলক ভাবে দশটি ব্লকে এই সিস্টেমটি রান করানো হচ্ছে, সফল হলে সারা রাজ্যেই আর কোনো সমস্যা হবে না", জানিয়েছেন আশা কর্মীরা।
প্রতিনিধি দল বলেছে, "স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে একজন আশাকর্মী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাবেন বলে জানিয়েছেন অধিকর্তা। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে কথা বলার জন্য একটি toll-free নম্বরও দিয়ে দিয়েছেন। করোনা আক্রান্ত আশা কর্মীদের প্রাপ্য টাকার ক্ষেত্রে জেলাগুলি এখনও বহু তথ্য পাঠায়নি বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা।ওনারা এই বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত আশা কর্মীদের পরিবারের কাছে বীমার টাকা পৌঁছনোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন।আমরা দাবী করেছি এই কাজে আরও গতি আসুক। গত ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত যেসব আশাকর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারগুলিকে দ্রুত CMOH এর কাছে আবেদন করতে হবে।"
তাঁরা আরও জানিয়েছেন, "আশাকর্মীদের ক্ষেত্রে কোনো ঘোষিত লিভ-পলিসি নেই। এই বিষয়ে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। VHND-র কাজ যাতে সব আশা কর্মীরা পান এবং সবাই যাতে টাকা পান এই বিষয়ে আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম। আমাদের উত্তরকন্যা অভিযান, যা গত ৮ আগস্ট হয়েছিল, তারপরেই এই সংক্রান্ত একটি অর্ডার তাঁরা দিয়েছেন। আগামী ২১ আগস্ট থেকে এই অর্ডার লাগু হবে। সরকারী জায়গায় প্রসব না হলে আশারা ৩৭ সপ্তাহ একজন গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়া স্বত্বেও কোনো টাকা পাননা। ৩০০ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়ে তাঁরা। কিন্তু এই প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সংখ্যা বাড়ানো। তাই বেসরকারি ক্ষেত্রে ডেলিভারি হলেও যাতে আশা কর্মীরা তাঁদের প্রাপ্য পান, সেই দাবী করা হলে উনি বিবেচনার আশ্বাস দেন। এছাড়াও, pre-mature ডেলিভারির ক্ষেত্রেও একই দাবি করা হলে উনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।"
প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, "আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল আশাকর্মীদের স্থায়িকরণ করতে হবে এবং পেনশন ও অবসরকালীন সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অবসরের বয়স ৬৫ বছর হয়েছে এবং অবসরের সময় তিনলাখ টাকা পাওয়ার দাবি আদায় হয়েছে। আমাদের আন্দোলনের ফলেই ২০০০ টাকা বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছিল। আমরা আজ দাবি করেছি সরকারী নিয়ম মেনে বোনাস দিতে হবে। এই বিষয়টি তাঁরা অর্থদফতরের কাছে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন।"
এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সিটুর রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি সহ অন্যান্য বাম নেতৃত্ব।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন