মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙতে হবে বলে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ভারতীয় রেল। মঙ্গলবার সেই চিঠির উত্তরে নবান্নের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, কোনওভাবেই ভাঙা হবে না স্কাইওয়াক।
পাশাপাশি, জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর জন্য আলিপুর বডিগার্ড লাইনসের জমি চেয়েছিল ভারতীয় রেল। রাজ্য বডিগার্ড লাইনসের জন্য জমি দেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে নবান্ন। রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, পাশেই কেন্দ্রীয় সরকারের জমি রয়েছে। সেই জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করুক মেট্রো।
দক্ষিণেশ্বরের মেট্রো পরিসরের জন্য ৯০ মিটার জমি দরকার। আর তার জন্য ভাঙতে হবে স্কাইওয়াক। এই আবেদন করে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছিল ভারতীয় রেল। চিঠির উত্তরে নবান্ন জানিয়েছে স্কাইওয়াক ভাঙা হবে না।
মঙ্গলবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ‘‘এদের ঔদ্ধত্য দেখে আমি অবাক হয়ে যাই! হাত দিচ্ছে কোথায়? হাত দিচ্ছে দক্ষিণেশ্বরে! ক’দিন বাদে বলবে কালীঘাটটা দিয়ে দাও! শুনব না। যদি আমাকে বলে নাখোদা মসজিদ ভেঙে দাও আমি থোড়াই শুনব? এগুলো আমি মানতে বাধ্য নই। মানব না। যদি ওদের কোনও রকম জট হয় সেই জট আমি দূর করব। দরকারে আমার সঙ্গে বসুন। আমি অন্য রুট দেখিয়ে দেব। রুট বদলাতে সাহায্য করব। এমন আগেও অনেক করেছি।’’
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মমতা মনে করিয়ে দেন, তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সারা ভারতবর্ষে এই ধরনেরই সমস্যা হয়েছিল ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর বানানোর সময়। তিনি বলেন, "আমাকে ম্যাপ দেখিয়ে বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পের জন্য এত জমি চাই, আমি সরেজমিনে সার্ভে করিয়েছিলাম। আর ১৫ হাজার একর মানুষের জমি বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম। ফলে সমস্যার সমাধান করতে চাইলে আমি সহযোগিতার হাত সব সময় বাড়িয়ে রেখেছি। আগামী দিনেও সহযোগিতা করব। কিন্তু তোমরা আমাদের বুকের উপর বসে আমাদের দীর্ঘদিনের যে হেরিটেজ, তা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করবে, সেটা আমি হতে দেব না।’’
মমতার সংযোজন, ‘‘দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক হৃদয়ের মণিমুক্তো। পুলিশের হৃদয়ের মণিকোঠায় আলিপুর বডিগার্ড লাইন্স। এর কোনওটাই আমি ভাঙতে দেব না। দরকারে রুট বদলাতে সাহায্য করব।’’
মমতা জানিয়েছেন, দক্ষিণেশ্বরের স্কাই ওয়াক ভাঙতে হলে ভারতীয় রেল এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে বাংলার ঐতিহ্যের কথা ভাবতে হবে। মমতার কথায়, ‘‘দক্ষিণেশ্বর আজকের নয়। সেখানে হাত দিতে হলে বিবেকানন্দের কথা মনে করতে হবে, রামৃষ্ণের কথা মনে করতে হবে। ভবতারিনী মায়ের কথা মনে করতে হবে। দক্ষিণেশ্বর বেলুড়ের কোটি কোটি ভক্ত আছে। তাদের কথা মনে করতে হবে।’’ এর পরেই মমতা দৃঢ় স্বরে আরও এক বার বলেন, ‘‘কিছুতেই করতে দেব না।’’
দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙা নিয়ে ভারতীয় রেলের প্রস্তাব প্রসঙ্গে মমতা কালীঘাটের স্কাই ওয়াক প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। মমতা বলেছেন, ‘‘আমিও তো কালীঘাটে স্কাই ওয়াক তৈরি করছি। কোথাও কি কোনও সমস্যা হয়েছে। বাধা ছিল। ওখানকার হকাররা কোথায় যাবেন, তা নিয়ে একটা অসুবিধা হচ্ছিল। আমি ওঁদের বসার ব্যবস্থা অন্যত্র করে দিয়েছি। এখন ওখানে স্কাই ওয়াকের কাজ চলছে। স্কাইওয়াক হয়ে গেলে তার দু’পাশে ওঁদের বসার ব্যবস্থা করে দেব।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শুধু একটু বুদ্ধি খরচ করতে হয়।’’
ভারতীয় রেলের তরফে জানানো হয়েছে, দক্ষিণেশ্বরে জমি না পেলে উত্তর–দক্ষিণ মেট্রোয় যাত্রার সময় কমানো সম্ভব নয়। মেট্রোর লাইন ইচ্ছা মতো যে কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন