আর জি কর কাণ্ডে উত্তাল গোটা রাজ্য। এই আবহে মহিলাদের নিরাপত্তার স্বার্থে একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। নবান্নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্ভব হলে মহিলাদের রাতের শিফট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। যদিও নবান্নের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন আন্দোলনকারীরা।
মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুনের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আবহে শনিবার দুপুরে নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, স্বাস্থ্যসচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের অন্য শীর্ষকর্তারা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই বৈঠকের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় রাতের কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তায় মোট ১৭টি পদক্ষেপের কথা জানান। নবান্নের পক্ষ থেকে মহিলাদের রাতে নিরাপত্তার স্বার্থে আনা হচ্ছে ‘রাত্তিরের সাথী’ অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে নিকটবর্তী থানার সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবেন মহিলারা।
এক নজরে নবান্নের ১৭ টি পদক্ষেপ –
১। কর্মস্থলে মহিলাদের জন্য পৃথক বিশ্রামকক্ষ এবং শৌচালয়
২। রাতের শিফটে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের জন্য ‘রাত্তিরের সাথী অ্যাপ
৩। রাতের শিফটে যে মহিলারা কাজ করবেন, তাঁদের জন্য ‘রাত্তিরের সাথী’ নিরাপত্তা বাহিনী
৪। কর্মস্থলে মহিলাদের জন্য সেফ জোন। থাকবে সিসিটিভি নজরদারি
৫। যে কোনো বিপদে ১০০ বা ১১২ নম্বরে পুলিশে ফোন
৬। মদ্যপ অবস্থায় রয়েছেন কিনা জানতে, রাতে হাসপাতালে নিঃশ্বাস পরীক্ষা
৭। যৌন হেনস্থা রুখতে ‘বিশাখা কমিটি’কে সক্রিয় করায় জোর
৮। সরকারী এবং বেসরকারী ক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সকলকে সংবেদনশীল করতে জোর
৯। রাতে মেয়েদের দল হিসাবে কাজ করাতে বিশেষ জোর
১০। ‘রাত্তিরের সাথী’ আচরণবিধি মানার আবেদন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে
১১। সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালে মহিলা হস্টেলে রাতে পুলিশের টহলদারি
১২। সব হাসপাতালের প্রতিটি তলায় জলের ব্যবস্থা
১৩। হাসপাতালের প্রত্যেক কর্মচারীকে গলায় পরিচয়পত্র পড়া বাধ্যতামূল্ক
১৪। নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি হাসপাতালে পুলিশ নিরাপত্তায় আধিকারিক নিযুক্ত করা হবে
১৫। মহিলা চিকিৎসককে ১২ ঘন্টার বেশি ডিউটি দেওয়া যাবে না
১৬। যত দ্রুত সম্ভব মহিলাদের রাতের শিফট থেকে অব্যাহতি দিতে হবে
১৭। সমস্ত হাসপাতালে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হবে।
যদিও নবান্নের রাতের শিফট থেকে মহিলাদের অব্যাহতি দেওয়ার পদক্ষেপে খুশি নন আন্দোলনকারীরা। এবিষয়ে 'রাতের দখল নিন' আন্দোলনের আহ্বায়ক রিমঝিম সিংহ বলেন, ‘‘মেয়েদের নাইট ডিউটি বন্ধ করতে বলা তো মধ্যযুগে ফেরারই চেষ্টা। না, আমরা কেউ এর জন্য রাতদখল করতে পথে নামিনি।’’
অন্যদিকে, এনিয়ে ‘সেক্টর ফাইভ স্টেকহোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা প্রবীণ তথ্যপ্রযুক্তি কর্তা কল্যাণ কর বলছেন, ‘‘সেক্টর ফাইভের ১২০০ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মধ্যে ৫০ শতাংশই বিপিও, কল সেন্টার। সেখানে রাতে মেয়েদের ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাতে মেয়েদের কাজ করানো যাবে না বা কাজ করানো ভাল নয়, এই বার্তা গেলে সার্বিক ভাবেই কাজের সুযোগ কমবে। আমেরিকা, ইউরোপের সময় বা আন্তর্জাতিক কর্ম সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাতে কাজ করতেই হবে।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন